শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : রুচি ৩৬তম জাতীয় নারী হ্যান্ডবলে শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি। বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এবারের আসর নিয়ে টানা অষ্টমবারের মত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা ঘরে তুললো আনসার।
পল্টনস্থ শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী স্টেডিয়ামে সোমবার ফাইনালে আনসার ৩৫-২৯ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশকে। প্রথমার্ধে আনসার ১৭-১২ গোলে এগিয়ে ছিল।
১৯৮৩ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩৬টি আসরের মধ্যে বেশিরভাগ জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ আনসার। এবারের আসরসহ সব মিলিয়ে সংস্থাটি চ্যাম্পিয়ন হল ২৪ বার।
ফাইনালের প্রথমার্ধে একটু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও সময় যতো গড়িয়েছে আনসারের অভিজ্ঞতার কাছে হার মেনেছে পুলিশ। বিশেষ করে শেষ দিকে পুলিশের খেলোয়াড়দের স্ট্যামিনা একেবারেই কমে যেতে দেখা গেছে। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ১৫ নম্বও জার্সিধারী খেলোয়াড় রুবিনা ইসলাম।
এর আগে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ঢাকা জেলাকে ৩৪-২২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে পঞ্চগড় জেলা।
খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও জাতীয় প্রতিযোগিতা ‘আয়োজন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাগ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো: সালাউদ্দিন আহম্মেদ, যুগ্ম-সম্পাদক ও জাতীয় প্রতিযোগিতা ‘আয়োজন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য-সচিব রাশিদা আফজালুন নেসা, সদস্য মো: মকবুল হোসেন-সহ ফেডারেশনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্পনসর প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মার্কেটিং ম্যানেজার মো: শাহরিয়ার আলম।
জাতীয় নারী হ্যান্ডবলে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন দলকে দেওয়া হয়েছে ট্রফির পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার। এছাড়া রানার্স আপ দল পেয়েছে ১৫ হাজার, ৩য় স্থান ১০ হাজার টাকা।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “যারা আজকে বিজয়ী হয়েছেন তাদের অভিনন্দন। যারা খেলায় অংশ নিয়েছেন আজ তাদের সমাজে নারীর যে অবস্থান এটা জেনে না জেনেই আপনারা একটা ভূমিকা রাখছেন। আজ এখানে যখন আসি, খেলা দেখতে দেখতে মনে হলো আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটো জায়গায় নারী ফুটবল খেলা বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই দুটো জায়গায় মেয়েদের খেলার আয়োজন করে দিলাম। যার ফলে গ্রামের নারীরা খেলায় অংশ নিতে পারল। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য আমাদের গর্বিত করে।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, সামাজিক বন্ধনের গুরুত্ব অনেক, কিন্তু মাঠের অভাবে ঢাকা শহরে এই বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে। নারী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা কেবল খেলা নয়, এটি নারীর সাহস, সক্ষমতা ও আত্মপ্রকাশের প্রতীক। নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করতে, শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে, কর্মক্ষম হতে এবং বিশ্ব পরিমন্ডলে দেশের পতাকা তুলে ধরতে খেলাধুলার বিকল্প নেই।
তিনি যোগ করেন, ‘আমি ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে না থাকলেও নিজেকে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি এজন্য যে আমরা যখন প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে কথা বলি একই সঙ্গে সামাজিক পরিবেশের গুরুত্বটাও মানুষের সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝানোর চেষ্টা করি। নিজে একজন পরিবেশ আইনবিদ হয়ে বিভিন্ন মাঠ যখন দখল হয়ে যাচ্ছিল তখন সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলেছি ।’
তিনি এরপর বলেন, “আমাদের ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে শুধু মাত্র মোবাইল ও গেজেটের মাধ্যেমে। আগে যখন খেলার মাঠে কেউ যেত তার পাশের পাড়ার মানুষ আসত। ওদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেত। এখন আমার বাচ্চা মেশে আমার আর্থ সামাজিক বাস্তবতার লোকের সঙ্গে, আপনার বাচ্চা আপনার আর্থ সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জসপূর্ণ এমন লোকের সঙ্গে। যেখানে দায়িত্বশীলতা গড়ে উঠছে না।”
ঢাকা শহরে খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন,“ ঢাকা শহরে খেলার জায়গা নেই। ভুল না করলে ১৯টি মাঠ আছে। এখানে ১ কোটি ৬০ লাখের মানুষের বিপরীতে এই কয়টা মাঠ দিয়ে আমরা করব কি। এর মধ্যে কিছু মাঠের ব্যবস্থাপনা চলে গেছে কিছু কিছু কোম্পানি ও সংস্থার হাতে। এতে এলাকাবাসীর প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে আগেই প্রতিবাদ করেছি। এখনও একই অবস্থান রাখি।”