শিরোনাম
ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : দেশের প্রতিভাবান বক্সার সেলিম হোসেন ২০১০ সাল থেকে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। জাতীয় প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত দুটি স্বর্ণসহ জয় করেছেন আরো অনেক পদক।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকবার সুনামের সাথে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সেনাবাহিনীর ৩৩ বছর বয়সী এই বক্সার।
১৯৯২ সালে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী সেলিমের খুব ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল। পারিবারিক বাধা সত্ত্বেও, তিনি তার চাচার অনুপ্রেরণায় বক্সার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশনের বর্ষসেরা বক্সারের পুরস্কার জয় করেছিলেন রাজশাহীর ছেলে সেলিম। দেশের বক্সিং একদিন অন্যান্য খেলার মতই এগিয়ে যাবে বলে স্বপ্ন দেখেন সেলিম। ক্রিকেট, ফুটবলসহ অন্যান্য ক্রীড়াবিদদের মত বক্সাররাও একদিন তাদের প্রাপ্য সম্মান পাবে।
সেলিম মনে করেন বাংলাদেশে অনেক বক্সার আছে যাদের সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে এবং তাদের যথাযথ যত্ন এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার দরকার রয়েছে। যাতে তারা নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে পারে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করতে পারে।
বাসস’র সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে সেলিম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফেডারেশনের নতুন এ্যাডহক কমিটি দেশের বক্সিংকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বাসস : জাতীয় দলে কিভাবে সুযোগ পেয়েছিলেন?
সেলিম : যেহেতু আমি ছোটবেলা থেকেই বক্সিং খেলতাম, তাই বক্সিংয়ের প্রতি আগ্রহের কারনে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পাই। কারণ বক্সিংয়ে আমার পারফরমেন্স ভালো ছিল। তারপর আমি ধীরে ধীরে নিজেকে উন্নত করতে থাকি। আমাদের এলাকায় বড় ভাইদের সাথেও ক্যাম্প করেছিলাম যারা সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং সেখান থেকে আমার দক্ষতায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তারপর আমি বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই এবং স্বর্ণপদক জয় করি। আমার পারফরমেন্স এবং দক্ষতা বিবেচনা করে ফেডারেশন আমার উপর আস্থা রাখে এবং এইভাবে আমি জাতীয় বক্সিং দলে আমার স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছি।
বাসস : আন্তর্জাতিক অর্জন সম্পর্কে কিছু বলুন।
সেলিম : আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো একজন খেলোয়াড় যখন ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয় তখনই ফেডারেশনের নজরে আসে। কিন্তু আসলে একজন খেলোয়াড়ের সেরাটা বের করে আনার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োাজন। যখন আমি ঘরোয়া পর্যায়ে সন্তোষজনক পারফরমেন্স দেখিয়েছিলাম, তখন আমার সংগঠন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। তারপর আমি ২০২১ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব সামরিক চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণ করি। চ্যাম্পিয়নশীপে ভালো পারফর্মেন্স সত্ত্বেও, প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের বক্সারের বিপক্ষে আমি হেরে যাই। এরপর ২০২২ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ করি এবং একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচের পর ভারতীয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরাজিত হই। দুটি টুর্নামেন্টেই আমার পারফরমেন্স যথেষ্ট ভালো ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথ অভিজ্ঞতার অভাবে ফলাফল আনতে পারিনি। দুটি টুর্নামেন্টে পারফরমেন্স বিবেচনা কওে আমাকে চীনে অনুষ্ঠিত ১৯তম এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ৩৭ বছর পর এশিয়ান গেমসে দেশের ব্যক্তিগত ইভেন্টের পদক খরা শেষ করার ভালো সুযোগ ছিল। কিন্তু পুরুষদের ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণীতে কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানী প্রতিপক্ষ শুদাই হারাদারের কাছে হেরে যাওয়ার পর আমার সব আশা শেষ হয়ে যায়। যদি আমি ম্যাচটি জিততে পারতাম, তাহলে অন্তত একটি ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করতে পারতাম। জাপানের সাথে সমানভাবে লড়াই করার পরেও পাঁচজন বিচারকের ফলাফল আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এশিয়ান গেমসে আমাকে পঞ্চম স্থানে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। আমি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার পরও আমি অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কারণ আমি তখন জাতিসংঘ মিশনের জন্য বিদেশে ছিলাম।
বাসস : জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য সম্পর্কে কিছু বলুন।
সেলিম : ২০২১ সালে ৯ম বাংলাদেশ গেমসে এবং ২০২২ সালে ৩৭তম সিনিয়র বক্সিং প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জয় করি। ২০২২ সালের পর থেকে ফেডারেশন কোন ধরনের জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করেনি।
বাসস : বক্সার হবার ইচ্ছা কেন হলো ?
সেলিম : সত্যি বলতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। ক্রিকেট এবং ফুটবল বক্সিংয়ের তুলনায় ব্যয়বহুল খেলা, এতে অনেক সময়ও লাগে। আমার লক্ষ্য ছিল বক্সিং খেলা এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করা এবং ক্রীড়াবিদ হিসেবে মর্যাদা অর্জন করা যাতে আমি একটি সরকারি চাকরি করতে পারি। এই লক্ষ্য নিয়েই আমি একজন বক্সার হতে চেয়েছিলাম।
বাসস : আপনার স্বপ্নের কথা জানতে চাই।
সেলিম : আমার অনেক স্বপ্ন আছে কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আসন্ন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বক্সিং ইভেন্টে পদক জয়ের আমাদের ভালো সুযোগ রয়েছে। যেহেতু এসএ গেমসে ভারতের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খুবই কম, তাই আমাদের ভালো ফলাফল করার ভালো সুযোগ রয়েছে। এ কারনে এসএ গেমসের আগে যদি বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় এবং দেশের বাইরে তিন-চার মাসের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা যায়, তাহলে এসএ গেমসে ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব।