বাসস
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৩
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৬

খাগড়াছড়ি ইস্যুতে গুজবে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া : বাংলাফ্যাক্ট

ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস) : খাগড়াছড়ি ইস্যুতে নানা গুজবে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া যা শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, খাগড়াছড়ি ইস্যুতে দিনভর যেসব গুজবে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে তিনজনের নিহত হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। এ সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্ট-চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে বেশ কিছু গুজব শনাক্ত করেছে। এসব গুজব এলাকায় আরো উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ছড়ানো এসব অপতথ্যের মধ্যে ৮টি ভিডিও-কেন্দ্রিক এবং ২টি ছবি-কেন্দ্রিক ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্য দেশের ভিন্ন ঘটনার ভিডিও/ছবিকে খাগড়াছড়ির ঘটনার সাথে জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর প্রবণতা দেখতে পাওয়া গেছে।

গুজব : ১
খাগড়াছড়িতে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে- খাগড়াছড়িতে রাতে গোলাগুলি চলছে। আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট কিছু পেইজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায়।

কিন্তু ভিডিওটি খাগড়াছড়ির নয়। এটি আসলে ইন্দোনেশিয়ার। গত আগস্টের শেষের দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে কেন্দ্র করে দেশটিতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়। আলোচিত ভিডিওটি সেই সময়কার ঘটনার দৃশ্য।

গুজব : ২
পাহাড়ি আদিবাসীরা খাগড়াছড়ি মডেল মসজিদে আগুন দিয়েছে, এমন দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এই ভিডিওটি খাগড়াছড়ির কোনো ঘটনার নয়। এটি আসলে দিনাজপুরের ঘটনা। গত ২৮ আগস্টের দিনাজপুরের শহরের ‘জীবন মহল’ নামের একটি বিনোদন রিসোর্টে তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ হয়। ওই সময় বিক্ষুব্ধরা রিসোর্টের বিভিন্ন কাঠামোয় আগুন লাগায়। প্রচারিত ভিডিওটি সেই ঘটনার দৃশ্য।

খাগড়াছড়ি মডেল মসজিদে আগুন দেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে বাংলাফ্যাক্ট দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি মডেল মসজিদে আগুন দেওয়ার তথ্যটি মিথ্যা।’

গুজব : ৩
ফেসবুকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের ওপর হামলার একটি ছবি সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই একে খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক উত্তেজনার সঙ্গে যুক্ত করছেন।

কিন্তু ছবিটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। এটি ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। সেদিন খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে অভিযানে জব্দ টাকাসহ আটক দুই ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। প্রচারিত ছবিটি সেই ঘটনারই দৃশ্য।

গুজব : ৪
ফেসবুকে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর সামনে বসতি বাঙালিরা প্রকাশ্যে জুম্মদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে।

ছবিটি খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। এটি ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ সমর্থিত অস্ত্রধারীর হামলার ছবি।

গুজব : ৫
খাগড়াছড়িতে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বিজিবি ক্যাম্পে আগুন দিয়ে পাহাড়িরা অস্ত্র লুট করে নিয়ে উল্লাস করছে-এমন দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরতে দেখা যায়।

ভিডিওটি খাগড়াছড়ির কোনো ঘটনার নয়, বরং নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর। জিওলোকেশন বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বাংলাফ্যাক্ট।
গুজব : ৬
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে-পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাফ্যাক্ট যাচাই করে দেখেছে, এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। এটি ভারতের ত্রিপুরার। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এ দাবিতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এটি সেই সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও।

গুজব : ৭
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়-১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সেনাবাহিনী ও বিজিবির ওপর পাহাড়িদের হামলা চালানো ও অস্ত্র লুটের দৃশ্য।

এটি সাম্প্রতিক সময়ে নেপালে সংঘটিত জেন-জি বিক্ষোভের ভিডিও। জিওলোকেশন বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভিডিওটি নেপালের গৌশালা এলাকার পুলিশ সার্কেলে ধারণ করা হয়েছে।

গুজব : ৮
খাগড়াছড়িতে মুখে রঙ মেখে এক চাকমা যুবক আহত হওয়ার অভিনয় করছে-এমন দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়।

বাংলাফ্যাক্ট যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো চাকমা যুবকের নয়। এটি আদতে ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর কালসেং সাংমা তৈরি করেন এবং গত ১৮ জুলাই তার ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে প্রকাশিত হয়।

গুজব : ৯
খাগড়াছড়িতে আদিবাসীরা সেনাবাহিনীর সদস্যকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করছে-এমন দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু, এই ভিডিওটি খাগড়াছড়ির কোনো ঘটনার নয়। গত ২২ জুলাই ঢাকায় সচিবালয়ের সামনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার।

গুজব : ১০
সেনাবহিনী পাহাড়ি আদিবাসীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, এই দাবিতেও একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। কিন্তু, দেখা যায়, ভিডিওটি মিয়ানমারের পুরোনো ঘটনার। ছবিটি গণমাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘দেখা যাচ্ছে, খাগড়াছড়ি ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজবের ছবি ও ভিডিও’র মধ্যে অনেকগুলো অন্য দেশের ঘটনার, কিছু পুরনো বা ভিন্ন সময়ে তোলা। ফলে, ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট এই সঙ্কটময় মুহূর্তে জনমনে অস্থিরতা ও আতঙ্ক তৈরি করছে এবং পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে।’

বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট।