শিরোনাম

ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আজ রাজধানীর একটি হোটেলে কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) সহায়তায় ‘ব্যাংক ফেইলরস অ্যান্ড রেজ্যুলেশন রেজিম : আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য চ্যালেঞ্জেস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত যদি আগের মতোই চলতে থাকে, তাহলে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কোন রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে তা নির্বিশেষে সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।’
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন পিআরআই’র মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স পাস হওয়া কাজের অর্ধেক মাত্র। এর বাস্তবায়নের জন্য এখন প্রয়োজন কার্যকর প্রক্রিয়া, সিস্টেম এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় বিনিয়োগ। যা বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে রেজ্যুলেশন রেজিম কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা এবং আমানতকারীদের সুরক্ষার পাশাপাশি পদ্ধতিগত ঝুঁকি কমানোর সক্ষমতা না থাকলে এই অর্ডিন্যান্স কাগুজে প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বাস্তব কাজ হলো অপারেশনাল সক্ষমতা গড়ে তোলা-তদারকি সরঞ্জাম, মূল্যায়ন দক্ষতা, পুনরুদ্ধার ব্যবস্থাপনা এবং স্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রোটোকল। যা আস্থা পুনরুদ্ধার করবে এবং আর্থিক ব্যবস্থায় নতুন গতি সঞ্চার করবে। তখনই এই অর্ডিন্যান্স তার প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে।
সভাপতির বক্তব্যে পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বলেন, ‘অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৩৫ শতাংশে পৌঁছানো এক অভূতপূর্ব ঘটনা। যা বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতেও দেখা যায়নি এবং এটি কীভাবে ঘটল তা বিশ্লেষণমূলকভাবে বুঝা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রেক্ষাপট অনন্য এবং জটিল-যেমন আমাদের বাণিজ্য নীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকিং রেজ্যুলেশনের জন্য নিজস্ব কাঠামো প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে ইতিবাচক দিক হলো ব্যাংকিং খাতের রক্তক্ষরণ থেমে এসেছে এবং কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। আমি আশা করি আগামী বছর প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। এর জন্য আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি সুন্দর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন জাতির জন্য এক বড় উপহার হবে বলে আমি মনে করি। এরপর একটি নির্বাচিত সরকার আসবে-যারা প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থনৈতিক নীতি পরিচালনা করবে।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজ্যুলেশন ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাহির হোসেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন।
ড. আখতার বলেন, ‘আমাদের এফডিআই-টু-জিডিপি অনুপাত ইতোমধ্যে খুবই কম এবং উচ্চ এনপিএল ও চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সমন্বয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে।’
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা আইনগত হালনাগাদ, আমানত সুরক্ষা শক্তিশালীকরণ এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি উন্নয়নসহ অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারসমূহ নিয়ে মতবিনিময় করেন।