বাসস
  ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৫৭

সরকার দেশের কর ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও ব্যবসা বান্ধব করতে কাজ করছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। ছবি: এনবিআর ওয়েবসাইট

ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেছেন, সরকার দেশের কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর এবং ব্যবসা বান্ধব করতে কাজ করছে। ডিজিটালাইজেশন ও কর আইন সংস্কার এই প্রক্রিয়ার মূল অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, আমরা সবকিছু ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি, যাতে সিস্টেমে হস্তক্ষেপ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। এটি রাজস্ব প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও দক্ষতা আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এনবিআরের সদস্য ব্যারিস্টার মতাসিম বিল্লাহ ফারুকী।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, করদাতাদের জন্য ট্যাক্স রিফান্ড সহজ করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গত বছর আমরা নগদ রিফান্ড দিতে পারিনি, এই বছর আমরা মিলিতভাবে সমাধান খুঁজব।

তিনি জানান, ইনকাম ট্যাক্স আইন ২০২৩-এর ইংরেজি সংস্করণ সম্পন্ন হয়ে সরকারি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট আইন ইংরেজিতে অফিসিয়াল আকারে পাওয়া যাবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর ফাইল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, কর্পোরেট রিটার্ন আগামী বছর অনলাইনে জমা দিতে হবে। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং তথ্য পরিবর্তন বা বিকৃত করা সম্ভব হবে না।

তিনি স্বীকার করেন, বাংলাদেশের কর আইন এখনও আন্তর্জাতিক মানের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তবে মাঠ পর্যায়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির সাথে সঙ্গে সংস্কার ধীরে ধীরে করা হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব সংগ্রহ গত বছরের একই সময়ে মাত্র ৩ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রক্রিয়াটি শক্তিশালী করা গেলে রাজস্ব সংগ্রহ অব্যাহতভাবে বাড়বে, যা আমাদের আধুনিক ও ন্যায়সঙ্গত কর ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান আরও জানিয়েছেন, জাতীয় একক উইন্ডো (এনএসডাব্লিউ) সিস্টেমের মাধ্যমে শিগগিরই সব ডাবল ট্যাক্সেশন এগ্রিমেন্ট (ডিটিএ) সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট ডিজিটালভাবে ইস্যু করা হবে। এটি সেবাকে সরল ও দ্রুত করবে।

চেয়ারম্যান বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যু করা হয়েছে, যার ৮০ শতাংশ এক ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়।

তিনি আরও জানান, এনবিআরের পাশাপাশি আরও ১৮টি সরকারি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা শিগগিরই ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হচ্ছে। ডাবল ট্যাক্সেশন এগ্রিমেন্ট সংক্রান্ত সনদ, যেমন রয়্যালটি, ব্যবসার লাভ, ডিভিডেন্ড ও সুদের সনদ, শিগগিরি অনলাইনে পাওয়া যাবে। ডিটিএ সনদ দাখিলের ক্ষেত্রে যে বিলম্বের অভিযোগ আছে, তা আশা করছি এক মাসের মধ্যে সমাধান হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, ডিভিডেন্ডে হ্রাসকৃত উৎসে কর ও ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বিষয়ক সার্টিফিকেটও একই ডিজিটাল ব্যবস্থায় আনা হবে, যা ভ্যাট ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াবে।

কাস্টমস মূল্যায়ন বিষয়ে তিনি দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বলেন, মূল্যায়নের ভিত্তি অবশ্যই ট্রানজ্যাকশন প্রাইস হবে, আমি এটি পাঁচবার জোর দিয়ে বলছি। 

চেয়ারম্যান আরও বললেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের অতীত ৯০ দিনের রেকর্ডেড মান ছাড়া শুধু প্রকৃত লেনদেন মূল্যের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যদি কেউ ১০০ টাকার মাল ৫০ টাকার হিসাব দিয়ে আনে, আমরা তা ধরব; কিন্তু সঠিক ঘোষণা করলে হয়রানি গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি জানান, কিছু কাস্টমস হাউসে অনিয়মের অভিযোগ এখনও আছে। যেসব চালান এক ঘণ্টার মধ্যে ছাড়পত্র পায়, সেখানে সাধারণত কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু বাকি যেগুলোতে দরকষাকষি হয়, সেগুলোতে জটিলতা তৈরি হয়।

চূড়ান্তভাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বললেন, আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হবে। প্রশাসনিক ও নীতিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে যাতে কাস্টমস কার্যক্রমে আস্থা ও সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।