শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে ও বিশ্বমানের আধুনিক কারখানা স্থাপনের জন্য আলাদা শিল্প পার্ক বা শিল্পাঞ্চলের দাবি করেছেন লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উদ্যোক্তারা।
এ জন্য নীতিগত সহায়তা, কর-ভ্যাটের সুষম হার এবং জমি দিয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার মিলনায়তনে বাংলাদেশ হালকা প্রকৌশল এক্সপো ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা এ দাবি জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনের এই এক্সপো আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পণ্য এবং প্রযুক্তি রপ্তানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই পরিবর্তনে স্থানীয় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে এ শিল্পের বড় উন্নতি সম্ভব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় বাংলাদেশকে এখন বিষয়টি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নীতিগত সহায়তা দরকার। যদিও এই শিল্পের জন্য পৃথক জমি বরাদ্দ করা কঠিন, তারপরও আমরা এটি বিবেচনা করব। সেই হিসেবে এ খাতের জন্য একটি পৃথক অঞ্চল বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে।
উদ্যোক্তারা জানান, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের বৈশ্বিক বাজার এখন ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। অথচ রপ্তানি অনেক কম।
এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে রপ্তানিতে এটাকে কীভাবে তৈরি পোশাকের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো যায় সে সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ধারণা চান বাণিজ্য সচিব।
তিনি বলেন, ভিয়েতনামের রপ্তানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি পণ্য থেকে আসে, যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিশ্বব্যাংকের এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের সিনিয়র বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ এবং টিম লিডার হোসনে ফেরদৌস সুমি বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দামের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এখাতে উদ্ভাবন এবং বৈচিত্র্যের সুযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের উচিত এগুলোকে কাজে লাগানো।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, এই খাতটি একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। তবে রপ্তানি দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে গেছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা মূলধনের ঘাটতিতে রয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাদের সংযোগ অনেকটাই সীমিত।
তিনি বলেন, বিডার রোডম্যাপ অনুসারে এই খাতের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারের উচিত শুল্ক এবং কর সম্পর্কিত বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।
প্রকল্প পরিচালক আবদুর রহিম খান বলেন, এই খাতের নীতি এবং সমন্বয়ের কিছু সমস্যা রয়েছে, যা সমাধান করা প্রয়োজন। আমরা যদি শুল্ক এবং নীতি সম্পর্কিত বাধাগুলো দূর করতে পারি তবে এই খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
স্বাগত বক্তব্যে, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের মালিকদের এই সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্পটি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ খাতে পাঁচটি উপ-খাত রয়েছে, যেমন ছাঁচ, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স, কৃষি উৎপাদন যন্ত্রপাতি, ফাউন্ড্রি এবং বাইসাইকেল। যেখানে তারা প্রায় সকল খাতের জন্য সব ধরনের প্রকৌশল পণ্য উৎপাদন করে।
তিনি বলেন, এই খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য একটি পৃথক শিল্প পার্ক প্রয়োজন। আমাদের নীতিগত সহায়তা এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য কর ও শুল্ক ছাড়েরও প্রয়োজন।
দুই দিনব্যাপী এই মেলায় মোট ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
স্থানীয় প্রকৌশল পণ্য, পরিষেবা এবং প্রযুক্তির প্রচারে এই এক্সপো উদ্যোক্তা, ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে সবগুলো পক্ষকে ধারনা প্রদান করবে। এ ছাড়া, দেশীয় প্রকৌশল শিল্পের উদ্যোক্তারা এই খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নীতিনির্ধারক এবং গণমাধ্যমের সামনে বিভিন্ন নীতি প্রস্তাব উপস্থাপন করছেন।