শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৩০ জুন ২০২৫ (বাসস): জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহারে দুই দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে আজ সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। বন্দরে জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনার নামানো হচ্ছে। আবার বেসরকারি ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বন্দর থেকে কনটেইনার খুলে পণ্য খালাসও শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার রাত থেকেই কাস্টমসের অনুমোদন সাপেক্ষে বন্দরের কাজ ফের সচল হয়।
আজ সোমবার সকাল থেকে কাস্টমস হাউজে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলতে দেখা গেছে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সিএন্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্টরাও সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমদানির মূল্যায়ন ও ছাড়পত্রসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া বর্তমানে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হচ্ছে।
গত শনিবার থেকে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, কারণ কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া বন্দরের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। রোববার রাতে ঢাকায় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈঠকের পর কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর গতকাল রাতে আংশিকভাবে কাজ শুরু হলেও আজ সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পুরোদমে চলছে।
এর আগে আইসিডি থেকে ১ হাজার ৮৪৯ টিইইউ (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার একক) রপ্তানি কনটেইনার সময়মতো বন্দরে পৌঁছাতে না পারায় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) তিনটি জাহাজ রওনা দিতে পারেনি।
তবে সাইফ পাওয়ারটেকের টার্মিনাল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, গত রাতেই বেশিরভাগ কনটেইনার বন্দরে এসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘রাতেই বেশিরভাগ কনটেইনার চলে এসেছে। আমরা আশা করছি, গতকাল রওনা হতে না পারা তিনটি জাহাজ আজ নির্ধারিত কনটেইনার নিয়ে ছেড়ে যাবে। এনসিটি এবং সিসিটি উভয় ইয়ার্ডে আজ সকাল থেকেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, রপ্তানি পণ্যের কাস্টমস ছাড়পত্র ও পরিবহণ গত রাতেই শুরু হয়েছে। আজ সকাল থেকে আমদানি পণ্যের কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণেও কাস্টমস ও এজেন্ট কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এই অচলাবস্থায় সৃষ্ট বাণিজ্যিক ক্ষতি পূরণযোগ্য নয়। তবু আমরা আশা করি, কাস্টমস কর্মকর্তারা আন্তরিকভাবে আটকে থাকা কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করবেন।’
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম বলেন, ‘গত রাত থেকেই সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ সকাল থেকে পুরোদমে কাজ চলছে। আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন সক্রিয়ভাবে কাজ করে কনটেইনার জট নিরসন এবং রপ্তানি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারিসহ সব কার্যক্রম এখন পুরোপুরি সচল। যে-সব অতিরিক্ত কনটেইনার জমে গিয়েছিল, সেগুলো দ্রুত ছাড় করা হবে।’
এদিকে, আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, গত ৩৬ ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার কনটেইনার বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। তবে রাতেই প্রায় ২ হাজার কনটেইনার পাঠানো হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যেন কোনো জাহাজ রপ্তানি পণ্য ছাড়া বন্দর ছাড়তে না পারে।’