শিরোনাম
প্রতিবেদন : সৈয়দ এলতেফাত হোসাইন
ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে শহীদ হন ৫৩ বছর বয়সী সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক ওবায়দুল ইসলাম।
নতুন আশার আলো ও স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে বিজয় উদ্যাপনে রাস্তায় নামেন তিনি।
কিন্তু শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে যে বিজয় মিছিলে যোগ দেন, তা পরিণত হয় এক হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডিতে। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। এতে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সেদিন বিকেলে তিনি শানির আখড়ার গোবিন্দপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে যাত্রাবাড়ীর মিছিলে যোগ দিতে বের হয়েছিলেন।
ওবায়দুলের একমাত্র ছেলে মজহারুল ইসলাম (২৬) গোবিন্দপুরের বাসায় বাসসকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাবা যাত্রাবাড়ীর বিজয় মিছিলে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিকাল ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে।'
স্মৃতি রোমন্থন করে ওবায়দুলের একমাত্র মেয়ে মিথিলা বলেন, তার বাবার এক বন্ধু কামাল, যিনি নিজেও একজন সিএনজি চালক, বিকাল ৩টার দিকে তাদের বাড়িতে এসে জানন যে ওবায়দুল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
‘কামাল চাচা বলেছিলেন, তিনি বাবাকে ফোন করেছিলেন বিজয় মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু ফোন কেউ একজন ধরে বলেন, এই ফোনের মালিক যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন,’ বলেন মিথিলা।
তারপর দুই দিন ধরে তারা বাবার খোঁজে হন্যে হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছেন বলে জানান মজহারুল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে ৬ আগস্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে ওবায়দুলের মৃতদেহ খুঁজে পান তারা।
‘আমরা বাবার মৃতদেহ পেলেও কোনো ডেথ সার্টিফিকেট পাইনি। হাসপাতালের পরিচালককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সার্টিফিকেটের জন্য ময়নাতদন্ত দরকার। কিন্তু সেদিন অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল প্রোটোকল পালন করা প্রায় অসম্ভব ছিল,’ বলেন মজহারুল।
তিনি আরও বলেন, মরদেহ তখন ফুঁলে উঠেছিল বলে ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করেননি।
‘পরে আমরা বাবার মরদেহ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আমাদের পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি,’ বলেন মজহারুল।
তিনি জানান, তার বাবা শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে ছিলেন। কিন্তু এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, তা তারা কল্পনাও করেননি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
মজহারুল জানান, তিনি একসময় একটি কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর শোকে দীর্ঘ সময় কাজ করতে না পারায় চাকরি হারিয়েছেন।
শোকসন্তপ্ত পরিবারটি ওবায়দুলসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অসংখ্য শহীদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেছে। তারা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি — মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।