বাসস
  ১৯ জুন ২০২৫, ১৬:৫৮
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, ১৭:০৮

রাহাতের বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কেড়ে নিল বুলেট

শহীদ রাহাত হোসেন শরীফ -ছবি: বাসস

নরসিংদী, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ১৪ জুলাই ঢাকার উত্তরা আজমপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয় রাহাত হোসেন শরীফ। তার স্বপ্ন ছিল এইচএসসি শেষ করে জার্মানিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অজর্ন করা। কিন্তু তার পড়াশোনার সেই যাত্রা শুরুর ক’দিনের মাথায়ই একটি বুলেট কেড়ে নিল সব স্বপ্ন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউটিউব দেখে জার্মান ভাষা শেখা শুরু করে দেয় রাহাত। ১৮ জুলাই বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বের হয়ে তার আর বাসায় ফেরা হয়নি। কে জানত সেটিই হবে তার জীবনের শেষ বিকেল?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যায় রাহাত। ঢাকার উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় পুলিশের গুলিতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা সন্ধ্যা সাতটায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নরসিংদীর রায়পুরা থানার বাহেচর গ্রামের মো. সেলিম ফারাজীর একমাত্র ছেলে রাহাত। সে টঙ্গী শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছিল।

রাহাতের মা স্বপ্না আক্তার জানান, তার ছেলে নিয়মিত নামাজ পড়ত, কারো সঙ্গে উচ্চবাচ্য করত না, কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ছিল না।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে জার্মানিতে গিয়ে পড়ালেখার স্বপ্ন দেখত। ইউটিউবে ভাষা শিখে নিচ্ছিল। আমরা স্বল্প আয়ে চললেও চেষ্টা করতাম ওর সব কিছু পূরণ করতে। কিন্তু এখন আমাদের সব শেষ।’

রাহাতকে গ্রামের বাড়িতে তার দাদার কবরের পাশেই দাফন করা হয়। ছেলের মৃত্যুর পর মা স্বপ্না আক্তার দুই মাস পর ঢাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে নরসিংদীর গ্রামে ফিরে যান।

তিনি বলেন, ‘২০ বছরের সংসারে আমাদের একটাই সন্তান ছিল। আমি ওরে ভুলতে পারি না। এখনো ওর ছবি বুকে চেপে ঘুমাই। কাঁদতে কাঁদতে কখনো মূর্ছা যাই ।’

সেলিম ফারাজী বর্তমানে সৌদি আরবে প্রবাসী। কঠোর ছুটিনীতির কারণে ছেলের মৃত্যুতে দেশে আসতে পারেননি।

স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব, কিন্তু ওরে কখনো বুঝতে দেইনি, আমরা কতটা কষ্ট করে চলি। রাহাতই ছিল আমাদের আশা। সেই বন্দুকের গুলি শুধু আমার ছেলেকে হত্যা করেনি, আমাদের পরিবারের ভবিষ্যতও ধ্বংস করে দিয়েছে।’

নিজেদের সবেধন নীলমণি হারিয়ে শোকার্ত মা বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের হত্যার বিচার চাই... জানতে চাই, রাহাতের অপরাধ কী ছিল?’