শিরোনাম

ঢাকা, ৯ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : র্যাঙ্কিং রাউন্ড শেষ করে রোববার শেষ বিকেলে ঢাকা স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে পায়চারি করছিলেন আমান উল্লাহ ও আসিফ মাহমুদ। ঢাকায় চলমান ২৪তম তীর এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে প্রথমবার ঢাকায় এসেছেন দুই পাকিস্তানী আর্চার।
আসিফের বাড়ি ফয়সালাবাদ, আমান উল্লাহর মুলতান। নিতান্ত শখের বশে আরচ্যারী খেলেন এই দুজন। আসিফ মাত্র বছর তিনেক আগে আরচ্যারী খেলা শুরু করেছেন। আমান খেলছেন পাঁচ বছর।
খেলোয়াড় হলেও মূলত তাদের বড় পরিচয় দুজনই কৃষক। স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে আমান উল্লাহ বলছিলেন, “আমরা আসলে পাঞ্জাবের কৃষক। খেতে খামারে কাজ করি। দুজনেরই পেশা কৃষিকাজ। আমাদের ধান, গম, ভুট্টা, আখের জমি আছে। এগুলো বেশি চাষ হয় আমাদের ওখানে। বেশিরভাগ সময় মাঠে কাজ করি। এর ফাঁকে ফাঁকে আরচ্যারী অনুশীলন করি।”
পাকিস্তান থেকে তিন জন আর্চার এসেছেন ঢাকায়। আরেকজন রিজওয়ান ফাহিম। মাত্র ৫০ দিনের অনুশীলনে ঢাকা এসেছেন বলে জানালেন আসিফ। অল্প অনুশীলনে বড় মঞ্চে যে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি সেটা স্কোরবোর্ডেই প্রমাণ।
তিন জনই অংশ নিয়েছেন পুরুষ রিকার্ভ ইভেন্টে। যেখানে ৬২ জনের মধ্যে ৫৩তম হয়েছেন আমান উল্লাহ। স্কোর করেছেন ৫৮৮। আর আসিফ মাহমুদ ৫৭৯ স্কোর করেছেন। তিনি হয়েছেন ৫৭তম।
পাকিস্তানে আরচ্যারী মোটেও জনপ্রিয় খেলা নয়। সব মিলিয়ে ৫০০ আর্চার সে দেশে নিয়মিত আরচ্যারী খেলেন। পাকিস্তান আরচ্যারী ফেডারেশনও খেলাটি জনপ্রিয় করার কোনও উদ্যোগ নেয় না বলে জানালেন আমান, “আসলে আমাদের ফেডারেশন কখনোই ভাবে না আরচ্যারীর উন্নতি হোক। আমাদের অবস্থা দেখেই নিশ্চয় তা বুঝতে পারছেন।”
প্রথমবারের মত ঢাকা এসে উচ্ছ্বসিত আসিফ। তিনি বলেন, “করাচি ও ঢাকার মধ্যে কোনও তফাত নেই। আমার তো মনে হচ্ছে করাচিতেই আছি। ট্রাফিক ও জনসংখ্যাও মনে হয় একই রকম হবে। তবে বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো, অতিথিপরায়ণ। আর আমরা তো ভাই ভাই। যখন কোনও ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের দেখা হয় তখন তো ভালোই লাগে।”
পাকিস্তানে ক্রিকেট জনপ্রিয়। এরপরই হকি। কিন্তু এত খেলা থাকতে কেন তির ধনুকের প্রেমে পড়লেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ হেসে বলেন, “ইন্টারনেটে একদিন আরচ্যারী খেলা দেখে ভালো লেগে যায়। এরপর আমার ওস্তাদ যখন আমাকে বলে, তখন খেলাটা শিখি। এখানে প্রথমবার এসে হয়তো ভালো করিনি। পরের বার স্বর্ণ জিতব।”
পাকিস্তানে যতোই খেলাটা অজনপ্রিয় হোক না কেন একদিন তীর ধনুকে অলিম্পিকে খেলতে চান। আমান বলছিলেন সেটাই, “একদিন আমরা অলিম্পিকে সোনা জিতব। এটা আমাদের স্বপ্ন। সেই চেষ্টা করব আমরা। তবে সেক্ষেত্রে পাকিস্তানী আরচ্যারী ফেডারেশন যদি সমর্থন দেয় আর কোচ যদি আমাদের ওপর ভরসা করে তাহলে ইনশাল্লাহ একদিন অলিম্পিক থেকে পদক নিয়ে আসব।”
পাকিস্তানের মুলতান আর ফয়সালাবাদের মাঠে দিনরাত ফসল ফলানো এই দুই কৃষক এখন তীর ধনুকে স্বপ্ন বুনছেন। স্কোরবোর্ডে সাফল্য না থাকলেও তাদের চোখে আছে অদম্য জেদ, বিশ্বাস আর নিজের সীমা পেরোনোর ইচ্ছা। ক্রিকেটপ্রেমী এক দেশে আরচ্যারীকে ভালোবেসে তারা দেখিয়ে দিয়েছেন- মঞ্চ ছোট হোক বা বড়, স্বপ্নের আকাশ সবার জন্যই সমান বিস্তৃত। একদিন হয়তো সত্যিই কোনো অলিম্পিক মাঠে ওদের তীর গিয়ে লাগবে সোনার নিশানায়।