বাসস
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৩১

পাইন বির্তকে পেছনে ফেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ শুরু করছে অস্ট্রেলিয়া

ব্রিসবেন, ৬ ডিসেম্বর ২০২১ (বাসস) : টিম পাইনের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় গেল কয়েক সপ্তাহ সরগরম ছিলো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহল। সমালোচনার মুখে  অধিনায়কত্ব ও সাময়িকভাবে ক্রিকেট থেকে সরেও গেছেন পাইন। সব কিছু পিছনে ফেলে  নতুন অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে  নতুনভাবে পথচলা শুরুর স্বপ্ন অস্ট্রেলিয়ার। 
পাইন বির্তকে পেছনে ফেলে আগামী বুধবার থেকে নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজের ৭২তম  লড়াই শুরু করছে অস্ট্রেলিয়া। গেল মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের শিরোপা জয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে অসিরা। আ্যাশেজ দলের বেশ কিছু সদস্য টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন। 
ব্রিজবেনে বুধবার বাংলাদেশ সময়  সকাল ৬টায় শুরু হবে  পাঁচ টেস্ট  অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচটি । সিরিজটি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়  এরদুই দলের কাছেই  এর গুরুত্ব  আরো বেড়ে গেছে। 
সম্প্রতি পাইন ইস্যুতে টালমাটাল হয়ে ওঠে  অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট। ২০১৭ সালে ক্রিকেট তাসমানিয়ার নারী সহকর্মীকে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়ে বার্তা পাঠান পাইন। ক্রিকেট তাসমানিয়া ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) তদন্তে সেই কুরুচিপূর্ণ বার্তার প্রমানও মিলে। সেসব বার্তা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে পাইনকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। 
এরপর টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়েন পাইন। সাময়কিভাবে ক্রিকেট থেকে দূরে সড়ে যান তিনি। তবে পাইন বির্তককে পেছনে ফেলে ঘুড়ে দাঁড়াতে নতুন অধিনায়ক হিসেবে কামিন্সকে ও নতুন উইকেটরক্ষক হিসেবে অ্যালেক্স ক্যারিকে দলে নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। ইতোমধ্যে প্রথম টেস্টের একাদশও ঘোষনা করেছে অস্ট্রেলিয়া। সেটিও আবার প্রথম টেস্টের তিনদিন আগে।
অস্ট্রেলিয়ার এই দল ঘোষনায় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাইন বির্তককে ভুলে এখন ক্রিকেটেই বেশি মনোযোগ কামিন্স-স্মিথ ও ওয়ার্নারদের। নয়তো প্রথম টেস্টের তিন দিন আগেই একাদশ ঘোষনা অবশ্যই তাৎপর্যপুর্ন। সাধারণত টেস্টের আগের দিন একাদশ ঘোষনা করে থাকে অসিরা। 
একাদশে কারা থাকবেন সেটি একরকম অনুমেয়ই ছিলো। তবে পাঁচ নম্বরের ব্যাটার নিয়ে দোটানায় ছিলো অস্ট্রেলিয়া। সেই লড়াইয়ে ছিলেন উসমান খাজা ও ট্রাভিস হেড। শেষ পর্যন্ত একাদশে সুযোগ করে নেন হেড।
খাজা ও হেডের মধ্যে একজনকে বাছাটা কঠিন ছিলো বলে জানিয়েছেন নয়া অধিনায়ক কামিন্স। তিনি বলেছিলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন ছিল। দু’টোই ভালো অপশন ছিল। দু’জনই দারুণ ফর্মে। উজির (উসমান খাজা) অভিজ্ঞতা অনেক, তাকে স্কোয়াডে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান। কিন্তু শেষ দুই বছরে ট্রাভ (ট্রাভিস হেড) আমাদের হয়ে অনেক খেলেছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সে রান করেছে। আমরা মনে করি, সে পুরোপুরি প্রস্তুত।’
একাদশ নির্বাচনের চেয়ে নিজের অধিনায়কত্বকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করেন কামিন্স। তিনি বলেন, ‘অ্যাশেজের মত বড় সিরিজ দিয়ে অধিনায়কত্ব শুরু হচ্ছে। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সতীর্থরা অনেক বেশি সাহস দিচ্ছেন। তাদের সহায়তায় অ্যাশেজের মত সিরিজের আগে দলকে এক সুতোয় করতে পেরেছি। আশা করছি, দল হিসেবেই আমরা অ্যাশেজে লড়াই করতে পারবো। ইংল্যান্ডকে হারানোটা সহজ নয়। তবে ঘরের মাঠের সুবিধা, আমাদের কিছুটা এগিয়ে রাখবে। এজন্য সিরিজের শুরুটা ভাল হওয়া দরকার।’
পাইন বির্তকে অতীত ভেবে নতুন ভাবে পথচলতে চান কামিন্স। তিনি বলেন, ‘পাইন বির্তক অতীত। আর এটি দলের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। কারন আমরা পেশাদার ক্রিকেটার, পেশাদার মনোভাব নিয়েই খেলি।’ 
পাইন ইস্যু নিয়ে কামিন্সের সুরে কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারও। তিনি বলেন, ‘পাইন ইস্যুর প্রভাব কোন মতেই অ্যাশেজ সিরিজে পড়বে না। ঘরের মাঠে এই সিরিজ জেতাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়ার মত কোন বির্তক বা সমালোচনায় সাম্প্রতিক সময়ে পড়তে হয়নি ইংল্যান্ডকে। তাই মাঠের খেলা নিয়েই মগ্ন ইংলিশরা। গেল মাসে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় ইংল্যান্ডরা। তবে পুরো আসরেই ভাল খেলেছে ইংলিশরা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি থেকে সম্পুর্ন আলাদা  টেস্ট ফরম্যাট । দলের কম্বিনেশনেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে ইংল্যান্ড। 
দীর্ঘদিন দলে ফিরেছেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। গত অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে নাটকীয়ভাবে ইংল্যান্ডকে ১ উইকেটে জয় এনে দিয়েছিলেন স্টোকসই। হেডিংলিতে ৩৫৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২৮৬ রানে নবম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শেষ ব্যাটার জ্যাক লিচকে নিয়ে শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন স্টোকস। ৭৬ রানের জুটিতে ৭৪ রানই ছিলো স্টোকসের। অপরাজিত ১৩৫ রান করে ম্যাচ সেরা হন স্টোকস। 
গত সিরিজে পিছিয়ে পড়েও, শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে ২-২ সমতায় সিরিজ শেষ করে  ইংল্যান্ড। সেটিও আত্মবিশ^াস করছে ইংলিশদের। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়ের রেকর্ডটি বেশ পুরনো হয়ে গেছে। ২০১০ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিলো ইংলিশরা। তাই এবারের অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়ায়, কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটকে। নিজেও এমনটা মনে করছেন রুট, ‘ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয় সব সময়ই কঠিন।  কতটা কঠিন তা অনেক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। এখানে (আমাদের জয়) সচরাচর দেখা যায় না। ১১ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিতেছিলাম। এবারের অ্যাশেজ সিরিজটি  দল ও  আমার অধিনায়কত্বের নির্ণায়ক হতে যাচ্ছে।’
গত আসরের সিরিজ নিয়ে রুট বলেন, ‘গতবারের মত কিছু যে হবে, সেটি ভাবার মত বোকা আমি নই। তবে এটা দারুণ একটি সুযোগ। আসছে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত এবং সিরিজ শুরু করতে তর সইছে না।’
সিরিজ শুরুর আগে বৃষ্টির কারনে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেনি ইংল্যান্ড। তাই অ্যাশেজ শুরুর আগে, নিজেদের প্রস্তুতিতে বেশ ঘাটতি আছে বলে মনে করেন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারটি অস্বীকার করতে পারি না, আমরাই সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ  প্রস্তুতি নেয়া ইংল্যান্ড দল যারা, ভালো প্রস্তুতি ছাড়া অ্যাশেজ খেলতে নামবো। বৃষ্টির কারনে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেনি। আমাদের ব্যাটাররা মাত্র ৮ বল খেলতে পেরেছে। বোলাররা মাত্র দশ ওভার বোলিং করতে পেরেছে।’
তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে অ্যাশেজের লড়াইয়ে নামার জন্য ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা পুরোপুরি ফিট বলে মনে করেন ব্রড। তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমরা অবশ্যই অ্যাশেজের জন্য ফিট। যদিও আমার মনে হয় না যে আমাদের দুই দলের কেউ এতোটা ফিট, যেখানে আমাদের থাকার কথা ছিল। তবে মাঠের লড়াইয়ে আমরা নিজেদের উজার করে দিবো। কাজটি বেশ কঠিন, তারপরও সিরিজে ভালো করতে আমরা প্রস্তুত।’
এখন পর্যন্ত অ্যাশেজে ৭১টি সিরিজের মধ্যে ৩৩টিতে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ৩২টিতে জিতেছে ইংল্যান্ড। ৬টি সিরিজ ড্র হয়েছে। আর ৩৩৫টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। অস্ট্রেলিয়ার জয় ১৩৬টি এবং ইংল্যান্ডের জয় ১০৮টি। ৯১টি টেস্ট ড্র হয়েছে।
১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম অ্যাশেজ সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়া ঐ তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো ইংল্যান্ড। 
অ্যাশেজ সিরিজের বর্তমান ট্রফিটি  ধরে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। কারন ২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজেদের মাঠে অ্যাশেজে ৪-০ ব্যবধানে জিতেছিলো অসিরা। এরপর ইংল্যান্ডের মাঠে ২০১৯ সালের সিরিজটি ২-২ সমতায় শেষ হয়। এতে অ্যাশেজ ট্রফি অস্ট্রেলিয়ার দখলে রয়েছে। 
ইংল্যান্ড দল : জো রুট (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জেমস এন্ডারসন, জনি বেয়ারস্টো, ডম বেস, স্টুয়ার্ট ব্রড, ররি বার্নস, জস বাটলার, জ্যাক ক্রলি, হাসিব হামিদ, ড্যান লরেন্স, জ্যাক লিচ, ডেভিড মালান, ক্রেইগ ওভারটন, ওলি পপ, ওলি রবিনসন, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড। 
অস্ট্রেলিয়া একাদশ : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), মারকাস হ্যারিস, ডেভিড ওয়ার্নার, মানার্স লাবুশেন, স্টিভ স্মিথ, ট্রাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), মিচেল স্টার্ক, নাথান লিঁ ও জশ হ্যাজেলউড।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়