শিরোনাম
মুন্সীগঞ্জ, ২৯ জুন ২০২৫ (বাসস) : ৩৯তম জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় শট পুট (গোলক নিক্ষেপ) ইভেন্টে স্বণর্ পদক জয়ী জাকিয়া সুলতানার স্বপ্ন অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা। একইসাথে জাতীয় পর্যায়ে নতুন রেকর্ড গড়ে সাফল্য অর্জন করা।
সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের চন্দনধুর গ্রামের জামাল তালুকদারের কণ্যা জাকিয়া সুলতানা ছোট কাল থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল। মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই মাঠের সাথে জাকিয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। অদম্য ইচ্ছা শক্তি তাকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে স্কুল পর্যায় জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শট পুট, জ্যাভলিন (বর্ষা) এবং ডিসকাস (চাকতি) থ্রোতে সাফল্য অর্জন করেন।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ এ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আয়োজিত জাতীয় প্রতিযোগিতায় শট পুটে ১ম এবং ডিসকাস থ্রোতে ৩য় স্থান অর্জন করেন। ২০২৪ সালে জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় জ্যাভলিনে ৩য়, শট পুটে ২য় স্থান অর্জন করেন। এ বছর অনুষ্ঠিত ৩৯ তম জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় শট পুট ইভেন্টে স্বণর্ পদক জয় করে সকলের নজড়ে আসেন। কোন প্রকার একাডেমিক প্রশিক্ষণ ছাড়া জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার অদম্য ইচ্ছাই জাকিয়াকে আজকের সাফল্য এনে দিয়েছে।
মফস্বল এলাকা থেকে উঠে আসা জাকিয়া সুলতানা বাসস কে জানান ,ভাই নেই, তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝ বোন শারীরিক প্রতিবন্ধি। বাবা ২০০৯ সালে মারা গেলে অভাবের সংসারে তিন মেয়েকে নিয়ে মা নাসিমা বেগম চলে আসে নানা বাড়ী। সেখানে থেকেই মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু। হাস মুরগি পালন করে আর মামাদের আর্থিক সহায়তায় সংসার চালায় মা। সংসারের অভাব অনটনের পিছুটান জাকিয়াকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অভাব অনটনের মধ্যেও জাকিয়া খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়ার চালিয়ে গেছে। চলতি বছর মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে জাকিয়া। আগামীতে খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাবার ইচ্ছা রয়েছে। নিয়মিত অনুশীলনই তাকে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক নিত্যা নন্দ ভক্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
জাকিয়া জানায়, ‘মা এবং বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসের অনুপ্রেরণায় তিনি এতদুর আসতে পেরেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল আলম স্যার পড়াশুনাসহ খেলাধুলার ক্ষেত্রে সবসময় সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।’
বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক নিত্যা নন্দ ভক্ত বলেন, ৮ম শেণিতে থাকাকালীন সময় থেকেই জাকিয়া এ্যাথলেটিক্সে থানা এবং জেলা পর্যায় ভালো করে আসছিল। তখন থেকেই কিছু নিয়ম কানুন শিখিয়ে আসছি। জাকিয়া একা একাই অনুশীলন করেছে। প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল আলম বলেন লেখাপড়া এবং খেলাধুলার প্রতি জাকিয়া ছিল আন্তরিক। জাকিয়ার মা এসে পড়াশুনার খোঁজ খবর নিতেন। চিন্তা ছিল জাকিয়াকে নিয়ে, অভাবের সংসারে মেয়ে লেখাপড়ায় ভালো করতে না পারলে সংসারে অন্ধকার নেমে আসবে।
৩৯তম জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় শট পুট ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জয় সহ বিগত কয়েক বছর সাফল্য অর্জন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চলতি মাসে জাকিয়াকে খেলোয়ার কোটায় চাকুরী দেবার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। সেনাবাহিনীতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ড গড়ে সাফল্য ধরে রাখার ব্যপারে আশাবাদী জাকিয়া। আগামীতে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা রয়েছে জাকিয়ার।