বাসস
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৬

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিপন্থী নীতিমালা রিভিউ করা হবে: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিপন্থী নীতিমালা রিভিউ করা হবে।’  

তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই এনইআইআর নীতিমালা রিভিউ করা হবে। সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। সাবেক আওয়ামী লীগ বা বর্তমান সরকারের যেসব নীতিমালা মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিপন্থী সেগুলো আমরা অবশ্যই রিভিউ করবো।’

আজ রোববার রাজধানীর হোটেল সারিনায় সেন্টার ফর টেকনোলোজি জার্নালিজম (সিটিজে) আয়োজিত ‘এনইআইআর: বাস্তবায়ন কাঠামো, জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক উদ্বেগ’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গোলটেবিল বৈঠকে কী-নোট উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর টেকনোলোজি জার্নালিজম (সিটিজে)-এর সভাপতি ও দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক হাসান জাকির। 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে পণ্য সবার দরকার সেটার দাম বেশি হতে হবে কেন? ৬৭ হাজার কোটি টাকা ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ করেছে তার ফল কী? উৎপাদনের নামে স্থানীয়ভাবে যারা মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বেল করে সুযোগ নিচ্ছে, তারা কতটুকু ভ্যালু এড করছে? যারা ইনভেস্টমেন্ট করে ব্যবসা করছে তারা প্রতি বছর ভ্যালু এডিশন করছে কিনা সেগুলো দেখতে হবে। দুই পক্ষের ট্যাক্সের পরিমাণ সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটা দেখতে হবে।

কোনো পলিসি সুনির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের জন্য তৈরি করা হলে সেই ব্যবসা দাঁড়াতে পারে না উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এভাবে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ দিলে তারা সকল ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা অ্যাসেম্বেলিংয়ের নামে এমনিতেই ৫০ শতাংশ সুযোগ বেশি নিচ্ছে, সেখানে অন্য ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে একক নিয়ন্ত্রণ নিলে এর ফলাফল ভালো হবে না।’ 

গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘যে কোনো নীতিমালা করার ক্ষেত্রে সেটা রাষ্ট্র ও জনগণের লাভ হচ্ছে কিনা সেটা সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। সেই নীতিমালা সামগ্রিক স্বার্থে নাকি সুনির্দিষ্ট সিন্ডিকেটকে সুযোগ দেয়ার জন্য করা হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। কারো পকেট ভারি করার জন্য নীতিমালা করা যাবে না।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশে যেখানে কর্মসংস্থান নেই, সেখানে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার) নীতিমালা করে যারা কর্মসংস্থান করেছে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না মেনে একতরফা সিদ্ধান্ত আগের স্বৈরাচারী সরকারকেও হার মানাচ্ছে। শেখ হাসিনার মতো পলিসি করা বিপজ্জনক এবং অত্যন্ত দুঃখজনক। অভ্যুত্থানের সামনে দাঁড়িয়ে এই সরকারেরও শেখ হাসিনার মতো একতরফা নীতি মেনে নেয়া যায় না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েই পলিসি তৈরি করতে হবে।’ 

গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার (বাক্কো)-এর সেক্রেটারি ফয়সল আলিম, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি আমিনুল হাকিম, বেসিসের সহায়ক কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান রাফায়েল কবীর, দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক মো: সায়েম ফারুকী, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দিন নয়ন, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান প্রমুখ। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার (বাক্কো) সেক্রেটারি ফয়সল আলিম বলেন, ‘এনইআইআর দরকার তবে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়ার জন্য যেভাবে ন্যক্কারজনক সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে যারা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করছে, প্রোডাকশন বা অ্যাসেম্বেলিং করছে বলা হচ্ছে; তারা আসলে বিদেশ থেকে মোবাইল পার্টস এনে প্যাকেজিং করছে। ’

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, স্মার্টফোন পেনিট্রেশন না হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাবে না। ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করতে চাইলে এখনই এনইআইআর নীতিমালা বাস্তবায়ন সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’

বেসিসের সাবেক চেয়ারম্যান রাফায়েল কবীর বলেন, ‘এনইআইআর নীতিমালা বাস্তবায়ন করার জন্য যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই যৌক্তিক না। এমন একটা জনগুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা অনির্বাচিত সরকার তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন দেখি না। সরকার বারবার বলছে, জুয়া বা নীতিবর্জিত কনটেন্ট বন্ধ করার জন্য এনইআইআর কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু জুয়া বা কোনো কনটেন্ট বন্ধ করার সঙ্গে এনইআইআর-এর কোনো সম্পর্ক নেই। 

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার বলছে ট্যাক্স ও সিকিউরিটির জন্য এনইআইআর বাস্তবায়ন করা জরুরি। কিন্তু এগুলো কি বিটিআরসির কাজ? এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ রয়েছে। তারা কেউ এনইআইআর নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তাহলে বিটিআরসির এগুলো নিয়ে এত আগ্রহ কেন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।