শিরোনাম

ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে গঠিত ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’-এর সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী, স্থপতি, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সেমিনার উদ্বোধন করেন। বিষয়ভিত্তিক কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
মহাপরিচালক ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান সক্ষমতা এবং ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়সমূহ উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে দেশে চলমান নগরায়ন, শিল্পায়ন, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা এবং ভূমিকম্প-ঝুঁকি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি উন্নীতকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য আহ্বান করা হয়।
সভায় বিশেষজ্ঞগণ এশিয়াসহ অন্য উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ও জনবলের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করেন। গ্যাপ এরিয়া ও এলাকাভিত্তিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের বিদ্যমান সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। ওয়াসার সকল পাম্প স্টেশনে ফায়ার সার্ভিসের ব্যবহারের জন্য ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভূমিকম্পে সরকারি কার্যালয়গুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে দেশের সকল ফায়ার স্টেশনকে সবার আগে ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি বা মেরামত করার আহ্বান জানানো হয়। শহরকেন্দ্রিক ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে জায়গা পাওয়া না গেলে বিভিন্ন সরকারি ভবনের নিচের দ্বিতীয় তলা ফায়ার স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া, সেমিনারে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের নিয়মিত রিফ্রেশার কোর্স করানো, সকল সেবা সংস্থাকে নিয়ে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয় নিয়ে মক এক্সারসাইজ করা, ফায়ার একাডেমি নির্মাণ, প্রচার-প্রচারণায় মিডিয়াকে আরো অধিক মাত্রায় সংশ্লিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগের বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি মূল্যায়ন পরীক্ষায় সহশিক্ষা কর্মসূচি হিসেবে নম্বর যুক্ত করা, আবাসিক এলাকা থেকে জরুরি ভিত্তিতে রাসায়নিক গোডাউন সরানো ও বিভিন্ন পর্যায়ে মহড়া ও প্রশিক্ষণ চলমান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দেশের সামগ্রিক জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ ভবিষ্যতে নিয়মিতভাবে পরামর্শ, গবেষণা এবং নীতিমালা প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে সভায় সবাই একমত পোষণ করেন।
মহাপরিচালক সকল বিশেষজ্ঞকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এই প্যানেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, তথ্যভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।’
সেমিনারে বক্তব্য দেন খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ (অব.), সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান (অব.), সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব, একুশে টিভির নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ প্রমুখ।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের সকল বিভাগীয় উপপরিচালক ও জেলা কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।