শিরোনাম

ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের প্রেরণা বেগম খালেদা জিয়া। কতো রোগ, শোক ও সংকটের মধ্যেও এই দলকে, এই দেশকে, এই মৃত্তিকাকে ছেড়ে যাননি। কখনোই পশ্চাৎপদ হননি। এটা আমাদের কতো বড় অহংকার—তার মতো নেতৃত্ব আমরা পেয়েছি।
আজ বুধবার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলাদল আয়োজিত ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গহীন অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখিয়েছেন, আলোর পথ দেখিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সংকটের মধ্যেও কীভাবে মাথা উঁচু করে থাকতে হয়, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কীভাবে সংযমী হয়ে কথা বলতে হয়, ঝঞ্ঝাট বিক্ষুব্ধ সময়েও কীভাবে ঐক্য রেখে এগিয়ে যেতে হয়, তিনি আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অত্যন্ত কৃত্রিমভাবে, আর্টিফিসিয়ালভাবে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থ করেছে। এটা তার স্বাভাবিক অসুস্থতা নয়। একজন মহিলা পায়ে হেঁটে জেলখানার ভেতরে ঢুকলেন একটি অন্যায়, অসত্য, মিথ্যা মামলায়। জেলে নেওয়ার পর প্রমাণ ছাড়াই নানা উপায়ে তাকে অসুস্থ করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্র যখন কারো করায়ত্বে থাকে এবং সেই রাষ্ট্র যখন একজন ঘৃণা পরায়ণ, প্রতিশোধ পরায়ণ, স্বৈরাচারী, আক্রমণাত্মক, হিংসা পরায়ণ শাসকের হাতে থাকে, তখন সেই রাষ্ট্র যেকোনো মানুষকে যেকোনোভাবে পর্যুদস্ত করতে পারে, হয়রানি করতে পারে। আমরা সেটাই দেখেছি। হাঁটতে পারা সুস্থ একজন মানুষের জীবনীশক্তি কীভাবে দুর্বল হলো? কেন হলো? এর পেছনে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের হাত রয়েছে। সেই প্রতিশোধ পরায়ণ, আক্রমণাত্মক নারী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া স্বামী হারিয়েছেন, বাড়ি হারিয়েছেন, সব কিছু হারিয়েছেন, চোখের সামনে সন্তানদের নির্যাতন দেখেছেন, তার পরও তিনি এই দেশ, মানুষ, মাটি, পানি ছেড়ে যাননি। এক অদ্ভুত বিশাল হৃদয় নিয়ে, অদ্ভুত দেশপ্রেম নিয়ে, স্বামীর রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে তিনি থেকেছেন। অথচ দেখেছি—আরেকজন, একটু সমস্যা হলেই পালিয়ে গেছে। দেশ ছেড়ে চলে গেছে। সময় আসতেই সবার আগে লাফ দিয়ে চলে গেছে তার (শেখ হাসিনা) ছেলের কাছে। এরপর জনতার রুদ্ররোষ দেখে সবকিছু ছেড়ে এখান থেকেও পালিয়েছে। আর বেগম খালেদা জিয়াকে তো পালাতে হয়নি।
রিজভী বলেন, আজ দেখলাম—অগ্রণী ব্যাংকের ভল্টে ৮৩২ ভরি সোনা, শেখ হাসিনার দু’টি ভল্টে! কতো বড় চোর হলে এসব সম্ভব? ও তো অবশ্যই পালাবে। সে জানে সে চোর। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংকে তো কোনো সোনা পাওয়া যায়নি। আজ খবর খুলে দেখবেন—৮৩২ ভরি সোনা একটি ব্যাংকের দুই ভল্ট থেকে পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা ও তার লোকেরা বড় বড় কথা বলত—‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশ ছেড়ে পালায় না’! কিন্তু যাদের চরিত্র চোরের, ডাকাতের, দস্যুর—তারা তো কাপুরুষ।
আর যখন ডাকাত-দস্যু-চোররা ধাওয়া খায়, তখন সবকিছু ফেলেই পালাতে হয়। কিছু নিয়ে যায়, কিছু ফেলে রেখে যায়। ওটা নেওয়ার সুযোগ পায়নি।
তিনি আরো বলেন, হরিলুটের পর বাংলাদেশকে দুর্বল করে শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন দেশকে অন্য কারো আজ্ঞাবাহী বানাতে। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অটুট মনোবল এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জাতিকে তিনি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছিলেন—তার ফলে শেখ হাসিনা কিছুই করতে পারেননি। অবশেষে তাকে পালাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে—এটা যাতে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, এবং সরকারও যেটা অঙ্গীকার করেছে, সেই অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার যে অধিকার জনগণের, সেটা নিশ্চিত হোক। সাড়ে ১০ বছর শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল—সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাবে এই অন্তর্বর্তী সরকার। তারা নিরপেক্ষ সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন, পালন করবেন।
রিজভী বলেন, এ জাতি, এ দেশের মানুষ, কোটি কোটি মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে ভালোবাসে। তার দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি তার অঙ্গীকার দেখে আজ প্রতিটি মানুষই তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করে।