শিরোনাম
ঢাকা, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): দেশে নিউরো রোগীদের চিকিৎসাসেবার পরিধি আরও বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে আরও একটি ৫শ’ শয্যার নতুন ভবন চালু হচ্ছে চলতি মাসেই।
ইতোমধ্যে হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই চালু হবে হাসপাতালের ৫শ’ শয্যার নতুন ভবনটি। এটি চালু হলে হাসপাতালটির মোট শয্যা সংখ্যা বেড়ে ১ হাজারে দাঁড়াবে। এর ফলে এটি দেশের বৃহত্তম বিশেষায়িত স্নায়ুরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর একটিতে পরিণত হবে।
ভবনটি ১৫ তলা। এর নিচের তিনতলা বেজমেন্ট হিসেবে থাকবে। সেখানে পার্কিং এরিয়ার পাশাপাশি সার্ভিস সেকশনও থাকবে। উপরের ১২ তলায় ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার ও ডায়াগনস্টিক ইউনিট থাকবে।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এখানে সবচেয়ে বেশি আসে স্ট্রোকের রোগী। তারপরই রয়েছে দুর্ঘটনার রোগী (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে আঘাত)। এছাড়া পার্কিনসন্স ডিমেনশিয়া, জিবিএস, মৃগী, হাইড্রোকেফালাসসহ নিউরোলজিক্যাল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা এ হাসপাতালে সেবা নেয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার নিউরোলজিক্যাল রোগের চিকিৎসা মেলে এ হাসপাতালে।
সরেজমিনে হাসপাতালটির নবনির্মিত ভবনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি বেজমেন্টসহ ১৫তলা বিশিষ্ট নিনস ইউনিট-২ সম্পূর্ণ সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত)। যেটি দেশের কোনো সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রথম সংযোজন। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা, উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে বা যানবাহন দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য ১শ’ শয্যার বিশেষায়িত ট্রমা ইউনিট রয়েছে। যেখানে ২৪ ঘণ্টা ওটি (অস্ত্রোপচার কক্ষ) সুবিধা আছে। চারটি ওটির মধ্যে দুটি মডুলার ওটি (জীবাণুমুক্ত এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অস্ত্রোপচারের জন্য বিশেষ ধরনের অপারেশন থিয়েটার) রয়েছে। জার্মান প্রযুক্তির অত্যাধুনিক এই ওটিতে অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীদের ইনফেকশন (সংক্রমণ) ঝুঁকি থাকবে না।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, হাসপাতালের নতুন ১৫ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি এই মাসেই উদ্বোধন করা হবে। তবে এখনো তারিখ ঠিক হয়নি। নতুন ভবনটি উদ্বোধন হলে হাসপাতালে সংযুক্ত হবে আরও ৫শ’ শয্যা।
তিনি বলেন, বর্তমানে শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়। উদ্বোধনের পর আমরা আরও অনেক রোগীকে সেবা দিতে পারব। বর্তমানে হাসপাতালে আইসিইউ-এইচডিএইউ মিলিয়ে ২০টি শয্যা আছে। নতুন ভবনে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হবে।
হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বাসসকে বলেন, এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার রোগী সেবা নেয়। এর মধ্যে ১২৫ থেকে ১৫০ জনকে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু শয্যা না থাকায় মাত্র ২০-২৫ জনকে ভর্তি করা যায়। তাই নতুন ভবনটি চালু হলে আরও ৫শ’ শয্যা যোগ হবে। তখন আরও বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ১ হাজার শয্যায় উন্নীত হলে এটা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় নিউরো হাসপাতাল। পরিসর বাড়ায় দুর্ঘটনায় মাথায় কিংবা শরীরে আঘাত পাওয়া রোগীদের সেবায় ১শ’ শয্যার ট্রমা ডেডিকেটেড রাখা হচ্ছে। শয্যা না থাকায় স্ট্রোকের রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা মেকানিক্যাল থ্রমবেকটমি করা যাচ্ছে না, অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করতে হচ্ছে। নতুন ভবন চালু হলে এ রোগীরা এখানেই সেবা পাবেন।
গত ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৩শ’ শয্যার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। রোগীদের চাপ বাড়তে থাকায় ওই ভবনেই আরও ২শ’ শয্যা বাড়ানো হয়। তাতেও সংকুলান না হওয়ায় আরও ৫শ’ বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।