শিরোনাম
রোস্তম আলী মণ্ডল
দিনাজপুর, ২২ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): স্বামী-সন্তান নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছিল দিনাজপুরের কাহারোলের গৃহবধূ কবিতা রানী রায়ের (৪৫)। নিরুপায় হয়ে ৪ বছর আগে একটি রিং বসিয়ে এর মধ্যে হাফ কেজি কেঁচো দিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদনের যাত্রা। একটি রিং থেকে বর্তমানে একশ রিং স্থাপনে চলছে তার কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের অগ্রযাত্রা। এক সময় দুবেলা দু-মুঠো ভাত খেতে যার সমস্যা হতো আজ তার আয় মাসে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা।
কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে গৃহবধূ কবিতা রানী রায় এখন সফল নারী উদ্যোক্তা। বৃহস্পতিবার কথা হয় তারগাও ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের এ সফল নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারে স্বামী সন্তান নিয়ে দিন কেটেছে। ৪ বছর আগে সিদ্ধান্ত নিই কেঁচো সার উৎপাদনের। শুরু একটি রিং দিয়ে হলেও এখন বড় পরিসরে চলে উৎপাদন।
তিনি জানান, এখন প্রতি দিন বিভিন্ন খামার থেকে গোবর সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহ করা সেই গোবর সার তার স্থাপন করা রিংয়ে ভর্তি করা হয়। এর পর কেঁচো মিশিয়ে তৈরি করা হয় কৃষিতে উন্নত ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার। তার কৃষি কারখানায় স্থাপন করা একশ রিং-এ এই সার উৎপাদন করতে প্রতিদিন ব্যয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এভাবে প্রতি মাসে ৫ টন কেচো সার উৎপাদন করা হয় তার কারখানায়।
কবিতা রানী বলেন, তার স্বামী, ছেলে ও বৌমাসহ ৪ জন মিলে প্রতিদিন কেঁচো সার উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছেন। কেঁচো সার বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে তাদের ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা রোজগার হয়।
তার স্বামী নিরঞ্জন রায় (৫০) বলেন, কবিতার ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল তাকে কেঁচো সার উৎপাদনে সফল করেছে। তার অর্জিত আয় দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলছে।
জানা গেছে, কবিতা রানীর কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে কৃষি খামার প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ চলে। নিজ উপজেলা ছাড়াও পাশের উপজেলা গুলো থেকেও কৃষকেরা তার কাছ থেকে এ সার নিয়ে যান। তার উৎপাদিত কেঁচো সার জমিতে ব্যবহারে অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে বলে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। তাই কবিতা রানীর উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রি করতে সংকটে পড়তে হয় না তাকে।
কবিতা রানী রায় জানান, প্রথমে যখন শুরু করি, মানুষ আমাকে অনেক কথা বলেছিল। হাত দিয়ে কেঁচো নাড়ছি এজন্য অনেকে তাকে ঘৃণা করতো। এখন আমার সফলতা দেখে এলাকায় প্রায় ১০ থেকে ১২টি পরিবার ঝুঁকেছেন এই কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি দিকে। আমার এখান থেকে নিজ উপজেলা ছাড়াও পাশের খানসামা, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় সার নিয়ে যাচ্ছে কৃষকেরা।
উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক ললিত চন্দ্র রায় ও মোজাম্মেল হক তাদের ভুট্টা ক্ষেতে এই সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পেয়েছেন। অন্য সারের তুলনায় এই সারের গুণগত মান অনেক ভালো বলে তারা অন্য কৃষকদের জানাচ্ছেন। এতে এলাকার অধিকাংশ কৃষক কবিতা রানীর খামারে উৎপাদন করা কেঁচো সার তাদের জমিতে নিয়মিত ব্যবহারে অধিক ফলন পাচ্ছেন।
ববিতা রানী জানান, কৃষি বিভাগ থেকে আরও সহযোগিতা পেলে কেঁচো সার উৎপাদনের খামারটি অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবেন। এ জন্য কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
কাহারোল উপজেলার কৃষি বিভাগের মাট কর্মকর্তা মো. ফাওজুল ইসলাম জানান, কবিতা রানীকে উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে কেঁচো সার উৎপাদনে রিং সরবরাহে সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া তার খামারে কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন করে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কাহারোল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সাদেক বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ কবিতা রানীকে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল নারীর উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন খামারে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রির জন্য মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ক্রয় ও ব্যবহারের পরামর্শ যাচ্ছেন।