শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনসাধারণের পাশে থেকে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর। সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগ লাঘবে সেনাবাহিনী সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা পায়নি সেনাবাহিনী। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মব ভায়োলেন্স কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যেকোনো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা মব ভায়োলেন্স অনেকাংশে কমিয়ে এনেছি। রংপুরের ঘটনাটিতে যে মব ভায়োলেন্স ঘটেছিল সেখানে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, ঈদুল আজহার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং, রেলস্টেশনে সার্বক্ষণিক টহল দিয়েছেন। স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমাদের পুরুষ অফিসারদের পাশাপাশি নারী অফিসার ও সৈনিকরা রাস্তায় নেমে নির্দ্বিধায় ঈদের সময় অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় আমরা ১২৫৫টি গাড়ি থেকে ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩ টাকা যাত্রীদের ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছি। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সেনাবাহিনীর আন্তরিকতা, সিনসিয়ারিটি, সততা এবং হার্ডওয়ার্কের জন্য।
‘বিগত সময়ের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পেরেছি। জাতীয় পতাকা বিক্রির সময় এক ব্যক্তিকে পেটানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ম্যাচ ছিল। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যতটুকু করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়েছে। এটি একটি দুঃখজনক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে পরবর্তীসময়ে আমরা ওই পতাকা বিক্রেতাকে ডেকে সমবেদনা প্রকাশ করি। এছাড়া তাকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়, যেন সে তার ব্যবসা সফলভাবে চালিয়ে যেতে পারে।
ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে পুশইনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল বলেন, এ বিষয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক এবং সজাগ আছে। সীমান্ত এলাকায় তারা টহল বাড়িয়েছে। সেসব জায়গায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে গত তিন সপ্তাহে সেনাবাহিনী ৫৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ৯৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট হতে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬৬৭টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ৯৯৬ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৫ হাজার ২৬২ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী রয়েছে।
সেনাবাহিনী গত ২৭ মে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে কুষ্টিয়া জেলা থেকে শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে তাদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হাতিরঝিল এলাকা হতে সুব্রত বাইন এর অপর দুই সহযোগী শ্যুটার আরাফাত এবং শরীফকে ৫ টি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, ১০ টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড এ্যামোনিশন ও ১ টি স্যাটেলাইট ফোনসহ সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে। সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম।
এছাড়াও একই দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আরো একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশন এলাকা হতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফরিদ আহমেদ বাবু ওরফে এক্সেল বাবুসহ আরো তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং ভূমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। উক্ত অভিযানের ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
গত ৪ জুন মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প এলাকা হতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেলকে ১০ জন সহযোগীসহ সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত বুনিয়া সোহেলের বিরুদ্ধে ৩০টির অধিক মামলা রয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, বিভিন্ন ধরনের ধারালো দেশীয় অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধারসহ বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেয়।