শিরোনাম
মোশতাক আহমদ
ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস): ঢাকা অঞ্চলের ৩০৫টি মৌজার ডিজিটাল জরিপ শুরু করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিচালক যুগ্মসচিব মোহাম্মদ কামরুল আরিফ বাসস’কে জানান, তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট মৌজাগুলোতে জরিপ কাজ শুরু করবেন। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ-২ শাখার যুগ্মসচিব সাবভীনা মনীর চিঠি স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে গত শনিবার (২৪ মে) ডিজিটাল ভূমি জরিপ সংক্রান্ত প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়মা ইউনুস বাসসকে জানান- ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে ভূমি জরিপ সংক্রান্ত অত্যাধুনিক এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও ঠকবাজি বন্ধ হবে। এবং জমির মালিকরা সহজে তাদের মালিকানা চিহ্নিত করতে পারবে। পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত অনেক জটিলতা কমে আসবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন সংক্রান্ত পত্রে বলা হয়, দ্যা সার্ভে অ্যাক্ট, ১৮৭৫ এর ৫ম আইনের ৩ ধারা এবং দ্যা স্টেট অ্যাকুইজিশন এণ্ড ট্যানেসি অ্যাক্ট ১৯৫০ (১৯৫১ সনের ২৮ নম্বর আইন) এর ১৪৪ ধারার ১ নম্বর উপ-ধারায় বর্ণিত ক্ষমতাবলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের কর্মসূচির আত্ততাভুক্ত ঢাকা জোনের ৩০৫টি মৌজা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ আরম্ভ করার প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হলো।
মৌজাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ১৩১টি এবং আড়াইহাজারের ১৭৪টি। এদিকে ঘরে বসেই যাতে মানুষ জমির খতিয়ান বা পর্চা পেতে পারে, তেমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে মোবাইলে কল করে ভূমি সংক্রান্ত কাগজের চাহিদা দিয়ে সেটা ডাকযোগে পাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের (এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প) মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জিএনএসএস, টোটাল সার্ভে সিস্টেম, ড্রোন, ওরাকল ডাটা ও জিআইএস সফটওয়্যারসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরীয় সহায়তায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে বিডিএস পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় আউটপুট নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে সারা বাংলাদেশে একযোগে বিডিএস প্রোগ্রাম চালু করা সম্ভব হবে।
বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা অফিসের মধ্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠাসহ অটোমেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। মৌজা-ম্যাপ ও রেকর্ডের মধ্যে লিংকেজ প্রতিষ্ঠার ফলে ভূমির মালিকরা সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে রেকর্ড ও প্লট দেখার সুযোগ পাবে।
বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বিধায় জনদুর্ভোগ কমবে এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি হবে। বিডিএস কার্যক্রমে একই সঙ্গে অনলাইনে মৌজা-ম্যাপ ও খতিয়ান পাওয়া যাবে। ১৫ দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্ট দাগ সংশোধনের নকশাসহ খতিয়ান তৈরি হবে বলে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি এখন থেকে ১৬১২২ নম্বরে ফোন করেই খতিয়ান ও ম্যাপের আবেদন করতে পারবেন ভূমি মালিকরা। এছাড়া জমির মালিক খতিয়ান ও নামজারি ফি এবং ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে দিতে পারবেন। সেই সঙ্গে ডাকযোগে খতিয়ান (পর্চা), জমির ম্যাপ নিজ ঠিকানায় নিতে পারবেন। এসব সুবিধা পুরোদমে চালু হলে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ কমবে।
ই-পর্চা, ই-রেজিস্ট্রেশন, এলডি ট্যাক্স সিস্টেম, ভার্চুয়াল শুনানি সিস্টেমের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন হবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা হবে। এর জন্য ভূমি অফিসে যেতে হবে না। এতে মানুষের অর্থ-খরচ ও ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব পাবে।
ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করা গেলে ভূমি জটিলতা নিরসনসহ অনেক মামলাও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ভূমি সংক্রান্ত সংশ্লিষ্টরা।