শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস): ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী। নদীর বেড়ি বাঁধের পাশেই ছোট একটি ছাউনি। এর মধ্যে বাস করে প্রায় ১২/১৫ জন শিশু। সারাদিন বিভিন্ন ধরনের ভাঙারি সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় ফিরে আসে ছাউনিতে। তারপর প্রায় সবাই পলিথিন মুখে দিয়ে কি যেন করে! তাদের মধ্যে সুজন নামে এক শিশুকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, ‘ড্যান্ডি লইতে লইতে জীবনটা পেলাসটিক হইয়্যা গেল’। তখনই বোঝা গেল এটি একটি নেশা, আর এই নেশার নাম ‘ড্যান্ডি’।
সম্প্রতি ‘ড্যান্ডি’ নামে নতুন ও সহজলভ্য মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ পথশিশু। সহজলভ্য বলে পথশিশুরাই এ মাদকে আসক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ড্যান্ডি এক ধরনের আঠা, যা মূলত সলিউশন নামে পরিচিত। এতে টলুইন নামে এক প্রকার উপাদান থাকে। টলুইন মাদক দ্রব্যের তালিকায় আছে। এটি জুতা তৈরি ও রিকশার টায়ার টিউব লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। এই আঠা পলিথিনের মধ্যে রেখে নিঃশ্বাস নিলে এক ধরনের নেশা হয়। এর ফলে ক্ষুধা ও শরীরের যন্ত্রণা অনুভূত হয় না। দীর্ঘমেয়াদে এ নেশা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। শিশুদের ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি।
সমাজে বসবাসরত অনেক শিশু এই ভয়াল নেশার ফাঁদে আটকা পড়েছে। এটি থেকে বের হতে পারছে না। মনোরোগ ও মাদকাসক্তি চিকিৎসাবিদদের মতে, বস্তির শিশু, রাস্তার টোকাই এবং যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের সন্তানেরা আগে মাদক নিত। এখন সমাজের অভিজাত শ্রেণির ছেলেমেয়েরাও মাদক নিয়ে থাকে। সাধারণত ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মাদক গ্রহণের হার বেশি। শুরুতে তারা বলে, নেশা করব না, শুধু একটু খেয়ে দেখি। কিন্তু একপর্যায়ে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। মাদকসেবীরা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। পথশিশুরা রাস্তায় বড় হয়। মাদকই তাদের একমাত্র বিনোদন।
পত্রিকায় প্রতিদিনই দেখা যায়, নেশা করার জন্য টাকা না পেয়ে সন্তান মা-বাবাকে খুন করছে। স্বামী, স্ত্রীকে খুন করছে। মাদকের জন্য চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সমাজে বেড়েই চলেছে। মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্যে মাদকাসক্তরা যে কোনো খারাপ কাজ করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে এটি নিরাময়যোগ্য, তবে সময় সাপেক্ষ। সরকারি পর্যায়ে শিশুদের মাদকাশক্তি প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। মাত্র ৪টি সরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে মাদকাসক্ত শিশুদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রোটেকশন অব বাংলাদেশ (সিএসপিবি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কিছু স্থানে ড্রপ ইন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মাদকাসক্ত শিশুদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
মাদক নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। শিশুদের নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। মাদকাসক্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিবারের সকল সদস্যকে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ দেখাতে হবে। যাদের অভিভাবক নেই তাদের সহায়তায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে মাদকের ভয়াবহতা থেকে অনেকটা রক্ষা করা যাবে আমাদের শিশুদের।