বাসস
  ০৯ মে ২০২৫, ২১:১০

ইট তৈরিতে দূষণ হ্রাস ও বায়ুর মান উন্নত করতে গবেষকদের নতুন উদ্ভাবন  

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে ইটভাটার কারণে বায়ু দূষণ হ্রাস ও বায়ুর মান উন্নত করতে কার্যকর সমাধান উদ্ভাবন করেছে একদল গবেষক।

বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথ (বিইউএসপিএইচ), স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আইসিডিডিআর’বি, গ্রিনটেক নলেজ সলিউশনস এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষকদের নতুন এই গবেষণায় প্রমাণভিত্তিক একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছে যার মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয় ও নির্গমন কমানোর সম্ভব। 

ব্যবহারিকতা ও মুনাফাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই কৌশলে কার্যকরের সুযোগ রয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমবর্ধমান বিপদ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যখন বারবার সতর্ক করে চলেছেন, তখন বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ পাবলিক হেলথ (বিইউএসপিএইচ), স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আইসিডিডিআর’বি, গ্রিনটেক নলেজ সলিউশনস এবং বুয়েটের গবেষকদের এই গবেষণা একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল ‘সায়েন্স’- এ প্রকাশিত এই র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়ালে প্রথমবারের মতো প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের ইটভাটা মালিকরা আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়াই পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী কৌশল গ্রহণে আগ্রহী ও সক্ষম যদি তারা সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা পান এবং যদি এই পরিবর্তনগুলো তাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়।

এটি দেশের ইটভাটা শিল্পে দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকর কৌশল নিয়ে পরিচালিত প্রথম গবেষণা যা ঐতিহ্যবাহী ইটভাটা শিল্পের মধ্যে ব্যাবসা ও পরিবেশ উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাবের পথ দেখায়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে ইটভাটার মালিকরা প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা পাওয়ার পর জ্বালানি-সাশ্রয়ী কর্মক্ষম পরিবর্তন বাস্তবায়নে ইচ্ছুক হন। এসব পরিবর্তনের ফলে কার্বন  নির্গমন ২০ শতাংশ কমে, জ্বালানি সাশ্রয় হয় ২৩ শতাংশ এবং এর সামাজিক ও পরিবেশগত সুফল আর্থিক ব্যয়ের তুলনায় ৬৫ গুণ বেশি ছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে ইট উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও এটি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এবং বায়ু দূষণেরও একটি প্রধান উৎস। প্রচলিত পদ্ধতিতে কয়লা পুরিয়ে ইট উৎপাদন করা হয় যাতে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, সূক্ষ্ম বস্তুকণা এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ নির্গত হয়। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবে এই খাত মানব স্বাস্থ্য, কৃষি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়ালের আওতায় ২০২২-২০২৩ সালের ইট উৎপাদন মৌসুমে বাংলাদেশের ২৭৬টি ইটভাটা মালিকদের শিক্ষামূলক উপকরণ, প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। এতে ইটবোঝাই ও  পোড়ানোর উন্নত পদ্ধতি এবং কয়লার পাশাপাশি বায়োমাস  জ্বালানি (যেমন-কাঠের গুড়া ধানের তুষ) ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়। এগুলো জ্বালানি সম্পূর্ণ পোড়াতে ও তাপের অপচয় রোধে সহায়ক। এর উদ্দেশ্য ছিল সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ইটভাটা মালিকদের ইট উৎপাদনে একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, উন্নত কৌশলগুলোর ব্যবহার শুধু স্থিতিশীলই থাকেনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষকরা বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানগুলো প্রমাণ করে যে ইটভাটার মালিকরা সহজ পরিবর্তনগুলো গ্রহণ করতে ইচ্ছুক যদি তারা সঠিক প্রশিক্ষণ  ও কারিগরি সহায়তা পান এবং তা তাদের অর্থনৈতিক লাভের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’

এই ফলাফলগুলো বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় কারণ এখানে ইটভাটা শিল্প নিয়ন্ত্রণের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বিরূপ পরিবেশে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শ্রমিকরা প্রতি বছর প্রায় ২৭ বিলিয়ন ইট উৎপাদন করে। যা বছরে দেশের কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ১৭ শতাংশ এবং সূক্ষ্ম বস্তুকণা নির্গমনের ১১ শতাংশের জন্য দায়ী বলে তারা মন্তব্য করেন।

গবেষণার জ্যেষ্ঠ সহকারী গবেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্টিফেন লুবি বলেন, এই গবেষণার অসাধারণ সাফল্য  প্রমাণ করে যে স্থানীয়  অংশীজনদের সঙ্গে গভীর সম্পৃক্ততা থাকলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব।