বাসস
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৩

নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপদ ডিজিটাল পরিসরের আহ্বান কানাডার

ছবি: বাসস

ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্মুক্ত ডিজিটাল পরিসর নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং।

আজ রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে ডিজিটাল সক্ষমতা জোরদারে আয়োজিত ‘বিল্ড ফর ডেমোক্রেসি’ হ্যাকাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসর যাতে নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্মুক্ত থাকে, এটি নিশ্চিত করা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

কানাডার হাইকমিশনার বলেন, ডিজিটাল অখণ্ডতা জনআস্থা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তিনি আরও বলেন, এই হ্যাকাথন কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের একটি আয়োজন নয়, বরং এটি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অজিত সিং বলেন, ‘আমরা এখানে কেবল উদ্ভাবনের জন্য উদ্ভাবন উৎসাহিত করতে আসিনি; আমরা এমন উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে এসেছি, যা মানুষের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করে এবং জনআস্থা বৃদ্ধি করে।’

বাংলাদেশের দ্রুত সম্প্রসারিত ডিজিটাল পরিসরে স্বচ্ছতার সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি ভুয়া তথ্য, হয়রানি ও বিশ্বাসের সংকটের মতো চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ যে ধারণাগুলোর সূচনা হচ্ছে, সেগুলো অনলাইন পরিসরকে আরও নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল করে তুলতে পারে।’

‘বিল্ড ফর ডেমোক্রেসি’ হ্যাকাথনটির আয়োজন করে সেকডেভ, যেখানে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা সহযোগী হিসেবে, ইউএনডিপি বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে, পিস মেকার স্টুডিও বাস্তবায়ন অংশীদার হিসেবে, অ্যাক্টিভেট রাইটস জ্ঞান অংশীদার হিসেবে এবং রূপান্তর ও সার্জ বাংলাদেশ আউটরিচ অংশীদার হিসেবে যুক্ত ছিল। ফিল্ম ফর পিস পুরস্কার অংশীদার হিসেবে যুক্ত ছিল।

এই উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণ প্রযুক্তিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, উদ্যোক্তা ও গবেষকরা একত্রিত হন। তারা ২০২৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তথ্যের অখণ্ডতা জোরদার, মতপ্রকাশের বৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং নিরাপদ অনলাইন সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে ব্যবহারিক ডিজিটাল উপকরণ তৈরিতে অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীরা দুটি মূল বিষয়—‘বৈচিত্র্যময় কণ্ঠস্বর সংরক্ষণ’ এবং ‘নিরাপদ ডিজিটাল পরিসর তৈরি’—এই দুটি থিমের আওতায় বাস্তব প্রয়োগযোগ্য ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সমাধান তৈরিতে মেন্টরদের দিকনির্দেশনায় কাজ করেন।

হ্যাকাথনের মূল আকর্ষণ ছিল শার্ক ট্যাঙ্কুস্টাইলের উদ্ভাবনী পর্ব, যেখানে অংশগ্রহণকারী দলগুলো বিচারকদের সামনে তাদের প্রোটোটাইপ উপস্থাপন করে। বিচারক প্যানেলে ছিলেন সেকডেভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কানাডীয় হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সেলর, ফিনল্যান্ডের হানড্রেড-এর একজন কমিউনিটি লিড, বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সম্পাদনা বিভাগের প্রতিনিধি এবং গ্রামীণফোনের আইসিটি প্রোডাক্টস বিভাগের প্রধান।

বিচারকরা প্রযুক্তিগত দক্ষতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, টেকসইতা, নৈতিকতা ও সামাজিক প্রভাবের ভিত্তিতে প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করেন।

বিজয়ী দলগুলোকে এক মাসের মধ্যে ‘মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট’ (এমভিপি) সম্পন্ন করতে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা ও প্রাথমিক তহবিল দেওয়া হবে।

২০২৬ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ‘বিল্ড ফর ডেমোক্রেসি’ প্রদর্শনী আয়োজনের কথা রয়েছে। এরপর জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচিত টুলগুলোর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হবে।

কানাডীয় হাইকমিশন অংশগ্রহণকারীদের উদ্ভাবন সমাজের বাস্তব চাহিদা, নৈতিক সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতার ভিত্তিতে গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।

অজিত সিং বলেন, ‘নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং ক্ষতি না করার নীতি কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়; এগুলোই জনআস্থার ভিত্তি।’

তিনি তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশের আগামী অধ্যায় শুধু তার নগর, জনপদ ও প্রতিষ্ঠানে নয়, তার ডিজিটাল গণপরিসরেও রচিত হবে।’