বাসস
  ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৩
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০৩

দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

ঢাকা, ৩ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে প্রথমবারের মত নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত।

গতরাতে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের ফাইনালে ভারত ৫২ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ২০০৫ ও ২০১৭ সালে ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেনি ভারত। তৃতীয়বারের চেষ্টায় শিরোপা ঘরে তুলল হারমানপ্রিত কৌরের দল। প্রথমবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারার বেদনায় পুড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা।

গতরাতে মুম্বাইয়ে ডিওয়াই পাতিল স্পোর্টস একাডেমিতে বৃষ্টির কারণে ফাইনাল ম্যাচ দুই ঘন্টা দেরিতে শুরু হয়। তারপরও ম্যাচে কোন ওভার কাটা হয়নি। টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে নেমে ভারতকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি ভার্মা। উদ্বোধনী জুটিতে ১০৬ বলে ১০৪ রান যোগ করেন তারা।

৮টি চারে ৪৫ রান করে মান্ধানা ফেরার পর, জেমিমা রদ্রিগেজকে নিয়ে ৬২ বলে ৬২ রান যোগ করেন শেফালি। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮৭ রানে আউট হন শেফালি। ৭৮ বল খেলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলেন এই ডান-হাতি ব্যাটার।

দলীয় ১৬৬ রানে শেফালির আউটের পর ভারতের মিডল অর্ডারের তিন ব্যাটার ছোট-ছোট ইনিংস খেলে বিদায় নেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করা জেমিমা ২৪, অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর ২০ ও আমানজোত কৌর ১২ রানে আউট হন। এরমধ্যে চতুর্থ উইকেটে দিপ্তি শর্মার সাথে ৫৬ বলে ৫২ রান যোগ করেন হারমানপ্রিত।

২৪৫ রানের মধ্যে তাদের বিদায়ের পর ষষ্ঠ উইকেটে ৩৫ বলে ৪৭ রানের জুটিতে ভারতকে বড় সংগ্রহ এনে দেন দিপ্তি ও উইকেটরক্ষক রিচা ঘোষ। ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।

৩টি চার ও ১টি ছক্কায় দিপ্তি ৫৮ বলে ৫৮ এবং ২৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রান করেন রিচা। দক্ষিণ আফ্রিকার আয়বোঙ্গা খাকা ৩ উইকেট নেন।

২৯৯ রান তাড়া করতে নেমে ৫১ রানের শুরু পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৩ রান করে রান আউট হন প্রোটিয়া ওপেনার তাজমিন ব্রিটস। তৃতীয় উইকেটে ৫১ বলে ৫২ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াইয়ে রাখেন অধিনায়ক লরা উলভার্ট ও সুনে লুস।

২৫ রান করা লুসকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন অফ-স্পিনার শেফালি। এরপর মারিজান কাপ ৪ ও সিনালো জাফতা ১৬ রানে ফিরলে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।

ষষ্ঠ উইকেটে ৬১ বলে ৬১ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের আশা জাগিয়ে রাখেন উলভার্ট ও অ্যানেরি ডার্কসেন। ৪০তম ওভারে দলীয় ২০৯ রানে ডার্কসেনকে থামিয়ে ভারতকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার দিপ্তি।

ডার্কসেন ফেরার ওভারেই ওয়ানডেতে ১১তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন উইলভার্ট। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পুরুষ ও নারী মিলিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটার উলভার্ট। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সেঞ্চুরির প্রথম রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি।

দারুণ সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের পথে বাঁধা হয়েছিলেন উলভার্ট। অবশেষে ৪২তম ওভারে দিপ্তির বলে আমানজোতকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন উলভার্ট। তার বিদায়ের পর বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয় প্রোটিয়ারা। ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৮ বলে ১০১ রান করেন উলভার্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন ডার্কসেন।

ভারতের দিপ্তি ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন। পুরো আসরে ২১৫ রানের পাশাপাশি ২২ উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন দিপ্তি। ফাইনালে ব্যাট হাতে ৮৭ রানের পর ২ উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড় হন শুরুতে ভারতের বিশ্বকাপ দলে না থাকা শেফালি। প্রাতিকা রাওয়ালের ইনজুরিতে বদলি হিসেবে সেমিফাইনালের আগে দলে ডাক পান শেফালি।

আট দলের এবারের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ খেলে ১টি করে জয় ও পরিত্যক্ত ম্যাচের সাথে ৫ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তম স্থানে থেকে আসর শেষ করে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত : ২৯৮/৭, ৫০ ওভার (শেফালি ৮৭, দিপ্তি ৫৮, খাকা ৩/৫৮)।

দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৪৬/১০, ৪৫.৩ ওভার (উলভার্ট ১০১, ডার্কসেন ৩৫, দিপ্তি ৫/৩৯)।

ফল : ভারত ৫২ রানে জয়ী।

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ : শেফালি ভার্মা (ভারত)।

প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট : দিপ্তি শার্মা (ভারত)।