শিরোনাম

জাহাঙ্গীর আলম
ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে নিরীহ আন্দোলনকারীদের হত্যার অভিযোগে সারা দেশে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়। এসব হত্যা মামলার মধ্যে ঢাকার সাভারে মাছ ব্যবসায়ী নবী নূর মোড়লকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এটিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম চার্জশিট।
মামলার আসামি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান ও কামরুল ইসলামের উস্কানিমুলক বক্তব্য এবং হুকুমে মামলার আসামি ডা. এনামুর রহমানের নেতৃত্বে অপর আসামিরা ভিকটিম নবী নূর মোড়লকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন।
মামলার চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব (৫৫), সাভারে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর (৫০), সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী আব্দুল গনি (৭২), সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা (৬৫) ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের আশুলিয়া থানার সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন (৪৮)।
চার্জশিটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার ফয়সাল আলম উল্লেখ করেছেন, মামলার ভিকটিম নবী নূর মোড়ল একজন মাছ ব্যবসায়ী। জুলাই, ২০২৪ এর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় সাভার মডেল থানার ওয়াপদা রোডের পাঁকা রাস্তার উপর আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেন ভিকটিম নবী নূর মোড়ল। এসময় নবী নূর মোড়লসহ আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করা অবস্থায় মামলার আসামি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের উস্কানিমুলক বক্তব্য ও হুকুমে আসামি ডা. এনামুর রহমান, মঞ্জুরুল আলম রাজিব, হাজি আব্দুল গনির নেতৃত্ব অপর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে হাতে পিস্তল, শর্টগান ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে দাঙ্গা হাঙ্গামার উদ্দেশ্যে সাভার বাজার দিক থেকে এসে আন্দোলন ভন্ডুল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওয়াপদা রোডে আন্দোলনকারীদের উপর ২০২৪ সালের ২০ জুলাই হামলা করে। এসময় আসামি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজন (৪৯) তার হাতে থাকা শর্টগান থেকে এবং সাভার উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব (৫৫) ও সাভারে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের (৫০) কাছে থাকা পিস্তল থেকে আন্দোলনকারীদের উপর এলোপাথারি গুলি বর্ষণ করে।এসময় আসামি মঞ্জুরুল আলম রাজিবের পিস্তল থেকে ছোঁড়া গুলি ভিকটিম নবী নূর মোড়লের পেটের বাম পাশে বিদ্ধ হয়ে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলি বিদ্ধ হওয়ায় ভিকটিম নবী নূর মোড়ল রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়ে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাদ্দাম হোসেন ভিকটিমকে সাভার এমান মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ২১ জুলাই ভিকটিম নবী নূর মোড়ল সাভার এমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে মারা যান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকার সাভারে ভিকটিম মাছ ব্যবসায়ী নবী নূর মোড়লকে আসামিরা গুলি করেন। চিকিৎসার জন্য তাকে সাভারের এমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ২১ জুলাই ভিকটিম নবী নূর মোড়ল সাভার এমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী আকলিমা বেগম (৪০) বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে।
আজ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার এসআই ফয়সাল আলম বাসসকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারে ভিকটিম মাছ ব্যবসায়ী নবী নূর মোড়লকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় শেখ হাসিনাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি।
মামলার বাদী ও নিহত নবী নূর মোড়লের স্ত্রী আকলিমা বেগম বাসসকে বলেন, ‘আমার স্বামীর হত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ সকল আসামির বিচার চাই।’