বাসস
  ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩৮
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০:০৩

পাঁচ বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : পিআইডি

ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বেসরকারি খাতের সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাবনা নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সভা শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং ইসলামী ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করতে পাঁচটি সংকটাপন্ন ব্যাংক একত্রিত করে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠিত হবে সেগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

নতুন ব্যাংকের জন্য প্রস্তাবিত নাম হলো ‘ইন্টার ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ অথবা ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘এই একীভূত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সকল দায় ও সম্পদ গ্রহণ করে নতুন ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে এবং পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।’

উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার প্রদান করবে; যার ১০ হাজার কোটি টাকা নগদে এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।

শেয়ার রূপান্তরের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধনে রূপান্তর করা হবে, যা বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের গ্রাহক ও অন্যান্য পাওনাদারদের ঋণের একাংশ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে। পরে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি পরিশোধ করা হবে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আইসিবি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির শেয়ার মালিকানা বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় ব্যাংকটিকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত নতুন ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হবে এবং স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’

প্রাথমিকভাবে অর্থ বিভাগ সরকারের পক্ষে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের মালিক হবে। তবে ধাপে ধাপে মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন বছরের মধ্যে স্ট্রাটেজিক পার্টনার নির্ধারণ করা হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটি বেসরকারিখাতে হস্তান্তর করা হবে। 

প্রেস সচিব নিশ্চিত করেন, ‘এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মচারী চাকরি এবং কোনো আমানতকারী তাদের আমানত হারাবেন না। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা নিশ্চিত করবে।’