বাসস
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:৫৪

জাতিসংঘে ভাষণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও সংস্কার তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

নিউইয়র্ক, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ন্যায়বিচার, সংস্কার এবং নতুন করে আন্তর্জাতিক সংহতির জন্য এক শক্তিশালী আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও সকল সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ সনদের ৮০তম বার্ষিকীতে অভিনন্দন জানান।

তিনি জাতিসংঘের ঐতিহাসিক সাফল্যের প্রশংসা করেন, তবে একই সঙ্গে বহুপাক্ষিকতা আরও শক্তিশালী করতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রূপান্তরের কথা তুলে ধরে প্রফেসর ইউনূস বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সংস্কার প্রক্রিয়াকে অনুপ্রাণিত করতে যুবসমাজ ছিল মুখ্য চালিকা শক্তি, যা বর্তমানে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, অবাধ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের জন্য বিস্তৃত অর্থনৈতিক ও শাসন সংস্কারের অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করেন।

মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের সঙ্গে সহযোগিতা করছে এবং অতীতের অপব্যবহার ঠেকাতে ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, তারা দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন এবং তাদের অবদান শুধু প্রবাসে নয়, স্বদেশেও সমানভাবে মূল্যবান।

তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আসন্ন রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের দিকে, যা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ, এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রতি আরও সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গাজায় সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পদক্ষেপ, তরুণদের নেতৃত্বে উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নতুন প্রযুক্তির ন্যায়সঙ্গত ভাগাভাগি, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও বিস্তাররোধ, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার (যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থ ও সম্পদ  পাচার বন্ধ হয়), প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যায্য বণ্টন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, আঞ্চলিক সংগঠনের পুনরুজ্জীবন এবং বহুপাক্ষিকতার সংস্কারের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তিনি আবারও তুলে ধরেন।

তিনি তার ‘তিন-শূন্য বিশ্বের’ স্বপ্নও উপস্থাপন করেন: শূন্য কার্বন, দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য শূন্য নেট সম্পদ কেন্দ্রীভবন, এবং শূন্য বেকারত্ব।

তার এ ভাষণের সময় সরকারের উপদেষ্টারা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের হলে উপস্থিত ছিলেন।