শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর সহযোগিতায় নরওয়ের অত্যাধুনিক সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ ‘আর ভি ড. ফ্রিডজোফ নানসেন’ আগামী ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা করবে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় এই কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার ১৩ জন জাতীয় গবেষকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ২৬ জন গবেষক অংশগ্রহণ করবেন। এ লক্ষ্যে ২০ আগস্ট দেশের ১৩ জন গবেষক শ্রীলঙ্কার কলম্বো পোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। জাহাজটি মৎস্য গবেষণা ও ইকোসিস্টেম জরিপের জন্য ২১ আগস্ট থেকে এক মাসের জন্য সমুদ্রের অবস্থান করবে এবং আগামী ২১ সেপ্টেম্বর জাহাজটি আবার বাংলাদেশের জলসীমায় ফিরে আসবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এ জরিপের মাধ্যমে মৎস্যসম্পদের মজুত নিরূপণ, ইকোসিস্টেম পর্যবেক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে, যা ভবিষ্যতে টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমার আয়তন প্রায় ১ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার, যা জৈবিক ও অজৈবিক সম্পদে সমৃদ্ধ। সামুদ্রিক নরওয়ে জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিশাল সম্ভাবনাময় এ খাত দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, আর ভি ড. ফ্রিডজোফ নানসেন হচ্ছে জাতিসংঘের পতাকাবাহী সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম গবেষণায় একটি অত্যাধুনিক জাহাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এর সহযোগিতায় নরওয়ের এ গবেষণা জাহাজটি সামুদ্রিক গবেষণা ও সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করে।
বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ১৯৭৯ সালে সর্বপ্রথম এবং ১৯৮০ সালে দ্বিতীয়বার এ জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গবেষণা ও সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করে। তৃতীয়বারের এবারও এক মাসের জন্য সেই সার্ভেটি পুনরায় পরিচালনা করবে।
উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য সম্পদের মজুদ নিরূপণ করা এবং ইকোসিস্টেমের সার্বিক অবস্থা নিরীক্ষণের জন্য সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের জরিপ এবং ইকোসিস্টেম নিরীক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জরিপের মাধ্যমে ৪৫৮ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। ২০১৬ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত মোট ৪৪ টি সার্ভে ক্রুজ হতে প্রাপ্ত তথ্য এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও আর্টিসানাল ল্যান্ডিং তথ্য বিশ্লেষণপূর্বক মজুদের ২টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে দুটিতে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্টকের বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং সব ধরনের ফিনফিশ ও চিংড়ির মজুদ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সমুদ্রে এক্যুয়াস্টিক সার্ভে এর মাধ্যমে ছোট আকারের পেলাজিক মাছের মজুদ নিরূপণে প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামাদি (ফিশিং গিয়ার, সায়েন্টিফিক সোনার ও ইকো-সাউন্ডার) ‘আর. ভি. মীন সন্ধানী’ জাহাজের সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একইসাথে ‘আর. ভি. মীন সন্ধানী’ এর পক্ষে ২০০ মিটারের অধিক গভীরতায় সকল মৌসুমে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না বিধায় টুনা ও অন্যান্য পেলাজিক মৎস্য জরিপ ও মজুদ নিরূপণ এবং ইকো-সিস্টেম সার্ভের জন্য উপযুক্ত বড় আকারের জরিপ জাহাজ প্রয়োজন। তাই ২০১৮ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুরোধের প্রেক্ষিতে ‘আর ভি ড. ফ্রিডজোফ নানসেন’ গবেষণা জাহাজ এর মাধ্যমে দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, জরিপ বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই জরিপ থেকে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, টেকসই আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় নীতি প্রণয়নে সরাসরি সহায়তা করবে। এছাড়া এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।
তিনি বলেন, সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতা ও পরিবেশ অনুযায়ী আবাসস্থলের মানচিত্র তৈরি করা হবে, যা প্রজাতি সংরক্ষণ ও মৎস্য ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে। আমরা আশা করি, এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে, টেকসই মৎস্য আহরণের পথ সুগম হবে এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় বৈজ্ঞানিক তথ্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।