শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ জুন ২০২৫ (বাসস): জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ এক বাণীতে বলেছেন, এই দিবস পালনে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে।
বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্যাতন মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং মানব মর্যাদার প্রতি একটি জঘন্য আঘাত। ন্যায়ভিত্তিক সমাজে এর কোনো স্থান নেই এবং এটি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়ার মতো বিষয় নয়। আজ আমরা বাংলাদেশের হাজারো নির্যাতিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সাহসী এবং সহনশীল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যারা শরীর ও মনে এই নৃশংসতার ক্ষত বহন করছেন। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য অনেক নির্যাতিতের প্রতিও আমাদের সংহতি প্রকাশ করছি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ভিন্নমতাবলম্বী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার দমনমূলক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই সময়ে আইনের অপব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি,আটক এবং নির্যাতন চালানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা আমাদের আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত, রাজনীতিকে কলুষিত এবং সমাজের একটি অংশকে বিষাক্ত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার নির্যাতনের এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রকৃতপক্ষে আগের শাসনামলের অপরাধীদের বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যই হলো এমন একটি বাংলাদেশ গড়া, যেখানে সব নাগরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারেন।
তিনি জানান, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আমরা অতীতের এই অন্ধকার কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় এবং জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র গড়তে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর মধ্যে স্বাক্ষর করেছে, তার একটি হলো " ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পার্সনস ফোরাম এনফোর্সড ডিসএপিয়েরেন্স"। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে যে, রাষ্ট্র বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার দ্বারা অপহরণ বা গোপন আটক এবং তা অস্বীকার করার মতো ঘটনা প্রতিরোধ ও সমাধানে আমরা দায়বদ্ধ।
এই স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা যা ঘরোয়া আইন প্রণয়নের পথে চালিত করছে—এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে—এবং এতে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের প্রত্যয় নিহিত আছে। এটি নির্যাতনের সকল রূপ নির্মূল করতে আমাদের আইনগত দায়বদ্ধতাকে জোরদার করেছে।
এছাড়াও, অন্তর্বর্তী সরকার " কমিশন অব এনফোর্সড ডিসএপিয়েরেন্স" নামে একটি অনুসন্ধান কমিশন গঠন করেছে, যা নির্যাতন, গুম এবং ইচ্ছাকৃত আটকের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগগুলো তদন্ত করবে, বিশেষ করে অতীতের রাজনৈতিক অস্থিরতার সম। এই স্বাধীন কমিশনের দায়িত্ব হলো পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে দোষীদের চিহ্নিত এবং প্রতিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ করা।
প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে উল্লেখ করেন,পুলিশ ও বিচার বিভাগে গভীর সংস্কার চলছে এবং মানবাধিকার, নৈতিক আচরণ এবং জোরজবরদস্তিমুক্ত অনুসন্ধান পদ্ধতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কারা কর্তৃপক্ষ ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
আটকের প্রক্রিয়ায় বিচারিক তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এখন থেকে সব প্রহরাধীন জিজ্ঞাসাবাদ ও আটকের রিপোর্ট ও ডকুমেন্টেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব হয়তো প্রাথমিক পদক্ষেপ, কিন্তু এগুলো অতীত থেকে একটি দৃঢ় ও স্পষ্ট প্রস্থান নির্দেশ করে। আমাদের লক্ষ্য কেবল ভবিষ্যতের নির্যাতন ঠেকানো নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করা।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, আজ আমরা অতীত ও বর্তমানের সকল নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমরা তাদের দুঃখ ও কষ্টকে স্বীকৃতি দিচ্ছি, আমরা ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার করছি।
তিনি বলেন, এই দিনটি হোক এক মোড় পরিবর্তনের সূচনা—বাংলাদেশের জন্য এবং সব দেশের জন্য, যারা শাসনের নৈতিক ভিত্তি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট।