বাসস
  ২৫ জুন ২০২৫, ২২:২৫

সংস্কার উদ্যোগের রূপরেখা নিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করল সরকার

ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত রূপরেখা সম্বলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

পুস্তিকায় বলা হয়েছে, এটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়, বরং একটি  ‘চলমান দলিল’, যা সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে হালনাগাদ করা হবে এবং নতুন উদ্যোগ যুক্ত হবে।

সংস্কারের আওতায় আনা অবকাঠামো খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ ও রেলপথ। এছাড়া পুস্তিকায় অন্যান্য যে খাতগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো—নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শিশু সুরক্ষা।

এছাড়া শিক্ষা (প্রযুক্তিগত ও কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ), সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম অধিকার, অভিবাসন, মানবাধিকার, যুব উন্নয়ন এবং সরকারি প্রশাসন খাতও সংস্কার উদ্যোগের আওতায় এসেছে।

পুস্তিকা অনুসারে, নির্বাচনী সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার জাতীয় সংসদের আসন পুনঃনির্ধারণ বিষয়ে একটি খসড়া অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে জারি করা হবে। এই খসড়া ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে।

এছাড়া সরকার ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর খসড়া বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের পর্যালোচনায় রয়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি খসড়াও কমিশনের কাছে রয়েছে।

বিচার খাতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

পুস্তিকায় বলা হয়েছে, সরকার একটি প্রস্তাবিত ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ’ খসড়া করেছে, যার মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে নিম্ন আদালতের প্রশাসনে বিদ্যমান নির্বাহী ও বিচার বিভাগের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হবে।

পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই খসড়া আইন বর্তমানে পর্যালোচনাধীন রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ সংশোধন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার মানদণ্ডের সঙ্গে এ আইনকে সামঞ্জস্য করার লক্ষ্যে  ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম পর্যায়ের সংশোধন করা হয়।

পুস্তিকায় বলা হয়েছে, সংশোধনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে সংগৃহীত প্রমাণ অগ্রহণযোগ্য হবে, বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ থাকবে, অনুপস্থিত আসামিদের জন্য আইনি প্রতিরক্ষা থাকবে এবং আদালতের অবমাননায় অভিযুক্তদের জন্য আপিলের সুযোগ রাখা হবে।

পুস্তিকায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংশোধনের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পথ সুগম করা। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা, দলীয় নিবন্ধন বাতিল এবং দলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

পুস্তিকায় বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত অঙ্কের (সর্বনিম্ন ৫০ লাখ টাকা) বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগে উৎসাহ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতার ব্যবস্থা, পৃথক বাণিজ্যিক বেঞ্চ, দ্রুত নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া, আপিল ব্যবস্থা এবং তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন টেইএক্স-এর মাধ্যমে এই উদ্যোগে বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে।

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।