বাসস
  ২২ জুন ২০২৫, ২১:২১

রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যায়বিচারে ওআইসি’র শক্তিশালী ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা’র (ওআইসি) শক্তিশালী ও আরও সমন্বিত ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

রোববার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা সংক্রান্ত ওআইসি’র অ্যাডহক মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটির সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

সভায় লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটি - রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো উম্মাহর জন্য এক ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্ব।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে ওআইসি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করায় তিনি সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পর থেকে বাংলাদেশ ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাকে জাতিসংঘ ‘পাঠ্যপুস্তকের জন্য জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।

তিনি জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর আরও ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। আমরা মানবিক, উন্নয়নমূলক ও নিরাপত্তাজনিত নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি।

তিনি গত কয়েক মাসের কূটনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশে রমজান সংহতি সফর, গাম্বিয়া, ওআইসি ও আসিয়ান প্রতিনিধি দলগুলোর সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা আরও সুস্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের পূর্বশর্ত হচ্ছে ন্যায়বিচার।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, রাখাইনে সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং এখন আরাকান আর্মি পুরো অঞ্চলসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে।

২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত রাখাইনে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৭ হাজারে পৌঁছেছে এবং নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

তিনি সতর্ক করেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের তহবিল ঘাটতি এবং ২০২৫-২৬ সালের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের নির্ধারিত প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ৬৮ শতাংশ পাওয়া গেছে। অর্থ সংকটের কারণে ইউনিসেফ ৩ জুন থেকে শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ করেছে এবং ডব্লিওএফপি (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) দুই দফায় খাদ্য রেশন কমিয়েছে।

উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় ওআইসি’র আইনি ও কূটনৈতিক সহায়তা জোরদারের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গাম্বিয়াকে মামলার পরিচালনায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত করতে ওআইসি কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। গাম্বিয়ার এখন আমাদের পূর্ণ সংহতি, সহায়তা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। ন্যায়বিচার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ার নেতৃত্বাধীন আসিয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি এবং সহিংসতা বন্ধ ও প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ওআইসি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ‘রোহিঙ্গা মুসলমান ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছে ঢাকা।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটে নিজেদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল, সম্ভবত তার চেয়েও বেশি কিছু করেছে। এখন আমরা ওআইসি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে আছি, তাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশায়। আমাদের আবেদন কেবল দান-সহায়তার জন্য নয়, বরং ন্যায়বিচার, সংহতি ও যৌথ দায়বদ্ধতার জন্য।

তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।