বাসস
  ৩০ মে ২০২৫, ২০:১৬

সরকার তিন দায়িত্ব পালনে কাজ করছে: সালেহউদ্দিন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব তিনটি- নির্বাচন, কিছু সংস্কার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা।

তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার করতে পারে, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের মতো খাতে নয়। যেমন- ব্যাংকিং, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং পুলিশ প্রশাসনের মতো খাতে সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে পারে।

বাংলাদেশ সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার কার্যালয়ে বাসস’কে এক সাক্ষাৎকারে এসব  কথা বলেন।  সাক্ষাৎকারে তিনি আসন্ন জাতীয় বাজেটের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন।

২ জুন জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এটি প্রথম বাজেট হবে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এর আগে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শাসনামলে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। 

তিনি  বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। সব রাজনৈতিক দলই চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। যদি সবাই গণতান্ত্রিক আচরণ করে তাহলে এটা সম্ভব। এমনকি দলের ভেতরেও গণতন্ত্রের চর্চা প্রয়োজন।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐকমত্য থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশাবাদী, নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ঠিক থাকবে।

শিগগিরই নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

বিভিন্ন দাবিতে নানা মহলের অবস্থান কর্মসূচি ও আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কর্মসূচি প্রায়ই দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়। আগের সরকারের সময় এগুলো করতে পারেনি। কারণ তখন তা দমন করা হত। কিন্তু এখন আমাদের জন্য ব্যাপারটা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এনবিআরকে পৃথক করার প্রতিশ্রুতি থেকে সরকার পিছু হটবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজস্ব বোর্ডের কর্মীদের উত্থাপিত যৌক্তিক সমস্যাগুলো তারা সমাধান করবেন।

আসন্ন বাজেটে সম্ভাব্য মহার্ঘ ভাতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে। যদি এটি ঘোষণা করা হয়, তাহলে সরকারকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের পূর্ণ প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা কতটা দিতে পারি, তা আমরা বিবেচনা করব।

এনবিআর সংস্কার প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরকে দুটি সত্তায় বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল। কারণ রাজস্ব বোর্ডকে পৃথক করার কোনও বিকল্প ছিল না। একটি সত্তা একইসঙ্গে নীতি (রাজস্ব) ও এর বাস্তবায়ন চালিয়ে যেতে পারে না। দেশের অন্য কোথাও এর অস্তিত্ব নেই।

এনবিআর পৃথকীকরণের ফলে উদ্ভূত জটিলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজস্ব বোর্ডকে পৃথক করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা এনবিআরকে পৃথক করেছি এবং এভাবে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও  রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠন করেছি, যা মূলত নীতিগতভাবে প্রয়োজনীয় ছিল।

দেশব্যাপী এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর সম্প্রতি জারি করা ‘রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাস্তবায়ন করা অনেক সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এই মুহূর্তে এনবিআর ভেঙে দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে এনবিআরের সব কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব নীতি বিভাগ ছোট হবে, যেখানে কর ব্যবস্থায় দক্ষ জনবল থাকবে, অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদদের পাশাপাশি যারা দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বিশ্লেষণ ও  পূর্বাভাসের কাজ করবেন।

তিনি বলেন, আমরা রাজস্ব ব্যবস্থার কার্যক্রম বাতিল করছি না, বরং তা ‘রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অধ্যাদেশটি নীতিগতভাবে জারি হয়েছে, এতে বিস্তারিত কিছুই ছিল না। জনবল, অর্গানোগ্রাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত নিয়মগুলো এখনও নির্ধারিত হয়নি।

তিনি জানান, এনবিআর কর্মীদের জানানো হয়েছে, সবকিছু আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে এবং কারো প্রতি অবিচার করা হবে না, বরং সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

এনবিআর বিভাজনের উদ্যোগ ২০০৮ সালে নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এই বোর্ডটি পৃথক করতে ১৭ বছর লেগেছে। এনবিআর সংস্কারে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে, তবে পরামর্শগুলো কতটা গ্রহণ করা হবে, তা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি বলেন, যেকোনো আইন প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ দেশের স্বার্থের জন্য জারি করা হয়। দেশ-বিদেশের অনেক বিশেষজ্ঞও এনবিআর সংস্কারের বিষয়ে তাদের মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।

এনবিআর বিভাজন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে হয়েছে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের সঙ্গে মূলত বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার নিজেই মনে করেছে, এনবিআর পৃথক করা দরকার। উন্নয়ন সহযোগী, যেমন-আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ছাড়াও সরকারের নিজস্ব উপলব্ধিই এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,  আয়কর ও  শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে তাদের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

এছাড়াও, বিসিএস (কর) ও  বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারের স্বার্থ রক্ষা করে রাজস্ব বোর্ড বিভাজনের প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারণে এনবিআর ও সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।