শিরোনাম
// মোশতাক আহমদ //
ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫(বাসস): সরকারের কঠোর নীতিমালার কারণে চলতি বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে যাচ্ছেন দেশের প্রকৃত দরিদ্র পরিবারের ৩০০ এরও বেশি মেধাবী মেডিকেল শিক্ষার্থী।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে গত ১৫ এপ্রিল এই নীতিমালা জারি করা হয়। ফলে চলতি বছর প্রকৃত মেধাবী ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির এ সুযোগ পেলেন।
এর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তি কোটায় সুযোগ নিতেন প্রভাবশালীদের গরিব আত্মীয়-স্বজনরা। নীতিমালায় কঠোর বিধান যুক্ত করার কারণে প্রভাবশালীরা এবার দরিদ্র কোটায় ভর্তির সুযোগ নিতে পারেননি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সরোয়ার বারী বাসসকে জানান, তিনি নিজেও একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসাবে শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা বোঝেন। তাই বছরের শুরুতে যখন মোট ভর্তিযোগ্য আসনের ৫ শতাংশ কোটার প্রসঙ্গ এসেছে, তখন তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অনুমোদন নিয়ে দরিদ্র কোটায় প্রকৃত মেধাবী কিন্তু অসচ্ছলদের খুঁজে বের করতে একটি নীতিমালার প্রয়োজন বলে মনে করেন। সে অনুযায়ী একটি নীতিমালা তৈরি করে তা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি সেটা অনুমোদন দেন। পরে এই কোটায় ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট)।
তিনি বলেন, ‘এই নীতিমালা পরবর্তী সরকার অনুসরণ করলে আগামীতেও প্রকৃত মেধাবী ও অসচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ জানায়, দরিদ্র ও অসচ্ছল কোটায় ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। তবে বুয়েটের বাছাইয়ে টিকেছিলেন প্রকৃত মেধাবী অসচ্ছল পরিবারের ৩২৮ জন শিক্ষার্থী। আগামী ১২ মে পর্যন্ত সারাদেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এই ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে।
এদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীর এমবিবিএস পড়াশোনার জন্য যেখানে ২৭ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, সেখানে এই দরিদ্র বা অসচ্ছল কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার টাকা পয়সা দিতে হবে না। তাদের শুধু মাসে খাওয়া খরচ হিসাবে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তাদের ভর্তি ফি, টিউশন ফি, সেশন ফি, লাইব্রেরি ফি থেকে শুরু করে প্রাকটিক্যাল সব ধরনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণও বিনামূল্য করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মল্লিকা খাতুন বাসসকে জানান, এ বছর ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯২টি আসনের বিপরীতে ৫ শতাংশ দরিদ্র কোটায় যাতে প্রকৃত মেধাবীরাই টিকে থাকে, এ জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অনুমোদন নিয়ে নীতিমালাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ফলে প্রকৃত দরিদ্র মেধাবীরাই এ কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, দরিদ্র কোটা ছাড়াও যারা সাধারণ কোটায় ২৭ থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি হচ্ছেন, তাদেরকেও আগের মত এককালীন নয়, ভর্তির সময় মাত্র ২০ শতাংশ টাকা দিয়ে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর কারণ অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এক সঙ্গে ২৭ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া খুবই কষ্টের ব্যাপার।
তিনি জানান, আগে সেশন ফি হিসাবে মাসে ১০ হাজার টাকা হিসাবে ৫ বছরের টাকা অর্থাৎ ৬০ মাসের জন্য ৬ লাখ টাকা আগেভাগেই নিয়ে নেওয়া হতো। এ বছর তা প্রতি সেশনের জন্য প্রতি মাসে নেওয়ার বিধান করে দেওয়া হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা এখন থেকে সেশন ফি হিসাবে এককালীন নয় বরং প্রতি মাসের সেশন ফির টাকা প্রতি মাসে দেবে, অগ্রিম নয়।
সরকারের ভিজিএফ কার্ডধারী পুরুষ বা মহিলার সন্তান, মন্ত্রীসভা বিভাগের জারিকৃত দরিদ্র এলাকার বাসিন্দার সন্তান, প্রতিবন্ধীর সন্তান, এতিম সন্তান এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তার সন্তান বা বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার চেয়ে কম আয়ের লোকের সন্তান, এভাবে দরিদ্র পরিবার চিহ্নিতকরণের অনেকগুলো ক্যাটাগরি দেওয়া হয় নীতিমালায়। গত ১৫ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা-১ শাখার উপ-সচিব রাহেলা রহমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত ওই নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়।