বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১৬:০৭
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ১৯:২২

‘গার্গী’ নিয়ে স্বপ্ন বুনন প্রণমীর

ছবি : বাসস

বাকৃবি (ময়মনসিংহ), ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস): ইচ্ছা শক্তিই মানুষকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে। কর্মশক্তি সাফল্য এনে দেয়। প্রণমী দাসের বেলায়ও তাই হয়েছে। সে এখন তরুণ উদ্দ্যেক্তা। দেশীয় গয়না ও রঙ-বেরংয়ের পোশাকের কারিগর।

প্রণমী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড সেফটি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। এই বয়সেই নিজেকে গড়ে তোলার পণ নিয়ে মাঠে নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গার্গী’ নামে পেজ খুলে সাফল্য পেয়েছে। করোনাকালীন ঘরে বসে থাকার অলস সময়টাকে প্রণমী বেছে নিয়েছে কর্ম হিসাবে। 

প্রণমী জানান, আমি বসে থাকার মেয়ে নই। আমার মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে তা আমার কর্ম দিয়ে প্রকাশ করতে চাই। গার্গীকে কোলে নিয়ে লালন করছি। আশা একদিন বড় হবে। 

অদম্য শিক্ষার্থী প্রণমী একজন শিল্পী, ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা। নিজ হাতে গয়না তৈরি করে সাজপ্রিয় নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করছে প্রণমী। সাথে রয়েছে রং-বেরংয়ের পোশাক ডিজাইন। গয়না আর রঙিন পোশাকের ক্ষুদ্র ব্যবসা ‘গার্গী’ প্রণমীর কাছে আজ শুধুই একটি অনলাইন বিজনেস নয়, এটি তার লালন করা স্বপ্নও বটে। আত্মনির্ভরশীল হবার সোপান। শখ থেকে পেশায় জড়িয়ে পড়ার গল্প।

প্রণমী ২০১৮ সালে বোনের কাছে বেড়াতে গিয়েছিল ঢাকায়। সেখানেই তার গয়না বানানো শুরু । বোনের হোস্টেলের বান্ধবীদের পছন্দমতো ডিজাইনে গয়না তৈরি করে দিয়েই শুরু। তখন হাতে ছিল কিছু কাঠের গয়না আর অল্প কয়েকটি রঙ। গয়না বানিয়ে কিছু টাকাও পেল। সেই আনন্দই ভবিষ্যতের পথ দেখায়।

‘গার্গী’ সত্যিকারের ডানা মেলে ২০২০ সালের কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়। ঘরে বসে ফেসবুকে খোলা পেজে সাজতে থাকে হাতে বানানো গয়নার ছবি। তখনই মানুষের সাড়া পেতে শুরু করে প্রণমীর সৃষ্টিগুলো। ডিজাইন, রঙ, উপকরণ—সবকিছুতেই ফুটে উঠতে থাকে তাঁর শিল্প-সত্তা।

গয়না বানানো বিষয়ে প্রণমীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। শখের আঁকাআঁকিই ছিল মূল ভরসা। প্রণমী বলেন, ফেসবুকে অন্যদের বানানো হাতে গড়া গয়না দেখে মনে হতো, আমি পারব। এই অদম্য ইচ্ছা শক্তিই আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। এখনতো রঙ তুলির কাজ ভালোই পারি। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই শুরু হয় সৃজনশীল প্রক্রিয়া।
তিনি আরও জানান, প্রথমে নিজের জন্য বানাতেন গয়না। কোনোটি খুলে আবার নতুন করে সাজাতেন। কখনো ডিজাইনে বদল, কখনো রঙে। এইভাবেই ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয় ‘গার্গী’র নিজস্বতা। কাঠ কিংবা মেটালের বেইজ, তার ওপর বিডস, পুঁতি, সুতা, ট্যাসেল, কড়ি, আঠা—সবকিছুর মিশেলে তৈরি হয় বাহারি শিল্পকর্ম।

শুরুর দিকে বাবার কিছুটা আপত্তিও ছিল। ‘তোর হলের বড় আপুরা যদি ফ্রিতে বানিয়ে নিতে চায়, তখন কী করবি?’—এমন প্রশ্নও শুনতে হয়েছে তাঁকে। তবুও প্রণমী থেমে যাননি। মেধা, শ্রম আর ধৈর্য দিয়েই এগিয়ে গেছেন।

প্রণমী বলেন, পুঁজি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করি। কারো কাছ থেকে কোন ধারদেনা করিনি। এখন মাসে ২০ থেকে ২৫টি অর্ডার পান। খুব সীমিত লাভে বিক্রি। নিজের পড়ালেখার খরচ যোগানোর মতো স্বাবলম্বী। কিছু গয়না সংগ্রহ করেও বিক্রি করেন। সবকিছু একাই সামলান। ডিজাইন, তৈরি, প্যাকেজিং, মার্কেটিং, ডেলিভারি পর্যন্ত।
‘গার্গী’র এই পথচলায় করোনাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বড় ভূমিকা রেখেছে। তখনই মহিলাদের অনেকেই আমার গয়না দেখতে পান। তারা অর্ডার দেয়। এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বড় ছোট আপুরা এবং পরিচিতজনেরা সবাই চেনে ‘গার্গী’কে। প্রণমী মানেই গার্গী।

প্রণমী জানান, এই শখের পেশাকে এখনো পূর্ণকালীন ক্যারিয়ার হিসেবে ভাবেননি। তাঁর ভাষায়, ‘এই কাজটা আমার শখ। আমি একটা গয়না ডিজাইন করব, সেটা কেউ পরে আনন্দ পাবে। এই ভাবনাটাই আমাকে আন্দোলিত করে। দিন শেষে এটাই আমার শান্তি ও স্বস্তির ঠিকানা। ’