বাসস
  ২১ মে ২০২৫, ১৫:৫৮

কোরবানির ঈদ ঘিরে লালমনিরহাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশিল্পীরা

ছবি : বাসস

লালমনিরহাট, ২১মে, ২০২৫ (বাসস) : ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে জেলার বাজারগুলোতে বাড়ছে কর্মচাঞ্চল্য। বিশেষ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কামার শিল্পীরা। 

কোরবানির ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ জবাই করা হয়, যা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এসব পশুর মাংস প্রস্তুতে প্রয়োজন পড়ে দা, বঁটি, ছুরি, ধামা, চাপাতিসহ নানা ধরনের ধারালো ধাতব সরঞ্জাম। ফলে ঈদ সামনে রেখে এসব তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা।

জেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, কামারশালাগুলোতে এখন টুংটাং শব্দে মুখর পরিবেশ। কয়লার চুলায় জ্বলছে আগুন, কামাররা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। কেউ কেউ সরঞ্জাম তৈরি করছেন, আবার কেউ দোকান বসিয়ে সরাসরি বিক্রি করছেন পশু জবাইয়ের সামগ্রী।

কামাররা জানিয়েছেন, সারা বছর কাজের চাপ কম থাকলেও ঈদুল আজহার সময় চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আগের তুলনায় এখন দোকানগুলোতে কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে।

সরঞ্জাম কিনতে বাজারগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। দাম কিছুটা বাড়লেও চাহিদার কারণে বিক্রি থেমে নেই। বড়বাড়ী বাজারে চাপাতি কিনতে আসা আব্দুল জলিল বলেন, ‘একটি চাপাতি ৫০০ টাকায় কিনেছি। দা, ছুরি ও জবাইয়ের ছুরি মেরামতের জন্য এনেছি। দাম মোটামুটি সহনীয় মনে হয়েছে।’

হেন্দ্রনগর বাজারে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদের সময় কসাই পাওয়া যায় না। তাই নিজের ব্যবহারের জন্য সরঞ্জাম কিনে নিচ্ছি।’

তবে সরঞ্জামের বাড়তি দামে কিছুটা অসন্তোষও দেখা গেছে। অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, দা, ছুরি ও চাপাতির দাম আগের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে। এমনকি শান দেওয়ার কাজেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও ছুরি শান দিতে ৪০ টাকা, আবার কোথাও ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে বাজারে ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৭০-২০০ টাকা, বড় ছুরি ১০০-২৫০ টাকা, দা ২০০-৬৫০ টাকা, বড় বঁটি ৩০০-৮০০ টাকা, জবাইয়ের ছুরি ৫০০-১০০০ টাকা এবং হাড় কাটার চাপাতি ৩০০-৪০০ টাকায়। বড় চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

সাপটিবাড়ি বাজারের কামার আশরাফুল হক জানান, ‘সারা বছর তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির ঈদ এলেই আমাদের সময়টা ভালো যায়।’

মহেন্দ্রনগর বাজারে চাপাতি বানাতে আসা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে যেটা ৪০০-৫০০ টাকায় কিনতাম, এখন নিজের লোহা দিয়েও ৫০০ টাকা লেগেছে।’ সবুজ ইসলাম নামে একজন জানান, ‘নিজের লোহা দিলেও ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি নিচ্ছে। বলছে, কয়লার দাম বেশি।’

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কামারশিল্পের ব্যস্ততা। তাদের পরিশ্রমেই তৈরি হচ্ছে কোরবানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।