বাসস
  ০৬ মে ২০২৫, ১৮:২৪

রাজশাহীতে ছাগল মোটাতাজাকরণে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামবাসীরা

ছবি: বাসস

ঢাকা, ৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক পরিবারগুলোকে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে ছাগল পালন ও মোটাতাজাকরণ খামার। 

জেলায় এখন ১৫০টির বেশি বড় ছাগল খামার আছে, যেখানে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার ছাগল পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে এবার প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার ছাগল মোটাতাজা করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ লাখ বেশি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান বলেন, রাজশাহীর সরকারি ছাগল খামারসহ দেশের সাতটি খামার আধুনিক করা হয়েছে। খামারগুলোতে অফিস, থাকার জায়গা, খাদ্য মজুদের গুদাম, কম্পোস্ট তৈরির ইউনিট ও পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার এখন বিভিন্ন এলাকায় প্রদর্শনী খামার গড়ে তুলছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও উন্নত জাতের ছাগল সরবরাহ করছে। রাজশাহীতেই এখন ১০০টির বেশি ছাগল মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে। এমনকি অনেক পরিবারও বাড়িতে ২-৫টি করে ছাগল পালন করছে।

রাজশাহীর গোদাগারি উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ছাগল উন্নয়ন খামার এখন ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ জাতের ছাগল পালনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও টেকসই খামার ব্যবস্থার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সরকারি দারিদ্র্য বিমোচন সংস্থা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, যেমন- ‘শতফুল বাংলাদেশ’ মিলে খামারিদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

বাগমারার উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের দম্পতি সোহেল রানা ও রিমা খাতুন জানান, সরকারি চাকরি না পেয়ে, তারা তিন বছর আগে বাড়ির পাশে একটি ছাগল খামার দেখে  আগ্রহী হন। তারা চলতি বছরে ৪০টি ছাগলের বাচ্চা কিনতে ২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে ৮টি বিক্রি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাকি ছাগলগুলো বিক্রি করে আরও ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হবে বলে আশা করছেন।
সোহেল ও রিমা উভয়েই স্নাতক পাশ।

সোহেল বলেন, ‘ছাগল পালন ও মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে অনেক গ্রামীণ পরিবার বেশ ভালো আয় করছে। এটা এখন আমাদের জীবিকার একটা ভালো উপায় হয়ে গেছে।’

অন্যদিকে, গ্রামের অনেক পরিবার বাড়িতেই ছাগল মোটাতাজা করছে। তারা প্রাকৃতিক খাবার, যেমন- খড়, গুঁড়, খৈল, সবুজ ঘাস ও গমের ভূষি ইত্যাদি ব্যবহার করছে। স্টেরয়েডের মতো ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করছে না।
শতফুল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক মো. নাজিম উদ্দীন মোল্লা জানান, তারা গ্রামের উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিচিকিৎসা ও পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল বিশ্বব্যাপী শীর্ষ পাঁচটি মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের জাতের মধ্যে অন্যতম। এ জাতের ছাগলের উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। এর চামড়ার মানও ভালো। এছাড়া আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারার জন্য এ জাতের ছাগল বেশ সুপরিচিত। 

তিনি আরো বলেন, এই ছাগল শুধু আয়ই বাড়াচ্ছে না, অধিকন্তু আমিষের চাহিদাও পূরণ করছে।

অধ্যাপক জালাল উদ্দিন বলেন, খামারিরা এখন প্রাকৃতিক উপায়ে ছাগল মোটাতাজা করছেন, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দু’দিক থেকেই ভালো। তবে এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ লোকবল বাড়ানো দরকার।