শিরোনাম

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর দুই দিনব্যাপী প্রথম আন্তর্জাতিক আন্তঃবিভাগীয় ‘ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি কংগ্রেস’ শুরু হয়েছে।
পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিপিএসআরএফ) এই কনফারেন্সের আয়োজন করেছে।
আজ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে এ কনফারেন্স শুরু হয়।
উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনফারেন্সের আহ্বায়ক পিপিএসআরএফ-এর চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ কনফারেন্সের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ফিচার বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন।
অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র কেবল একটি রাজনৈতিক কাঠামো নয়। এটি প্রতিষ্ঠান, অধিকার ও নাগরিক অংশগ্রহণের সমন্বিত চর্চা। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ট্রানজিশন ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজকের সম্মেলনটি সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি গবেষক ও স্কলারদের আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং সহনশীল সমাজ গঠনের পথনির্দেশ উঠে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যখন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, এমন এক সময়ে ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি কংগ্রেস ২০২৫-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়। তিনি বলেন, এই কংগ্রেসের মূল প্রতিপাদ্য- “ট্রানজিশনাল গণতন্ত্রে টেকসই রাজনৈতিক উন্নয়ন” আমাদের জাতীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে গভীরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাগুলো ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিক, সাংবিধানিক ও শাসনব্যবস্থাগত সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তব রূপ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, গবেষণাভিত্তিক অন্তর্দৃষ্টি ও তুলনামূলক অভিজ্ঞতা আরও দৃঢ় আইনগত ও সাংবিধানিক কাঠামো গঠনে সহায়তা করে। তত্ত্ব ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে গঠনমূলক চিন্তাভাবনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি আয়োজকদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই কংগ্রেসের আলোচনা বাংলাদেশে চলমান জাতীয় সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করবে এবং বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, গণতন্ত্র কোনো চূড়ান্ত গন্তব্য নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই যাত্রায় অনিশ্চয়তা অনিবার্য, তবে ধৈর্য ও সহনশীলতার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রকে টেকসই করা সম্ভব। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ‘রূপান্তর’ বলতে মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে মোকাবিলা করাকে বোঝায়, যার কোনো সহজ বা তাৎক্ষণিক সমাধান নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচন, সংস্কারের স্থায়িত্ব, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার-এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বহুমাত্রিক ও আন্তঃবিষয়ক আলোচনার বিকল্প নেই। এ ধরনের সম্মেলনই গণতন্ত্রকে নতুনভাবে বোঝার ক্ষেত্র তৈরি করে। প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ একটি সহনশীল ও আশাবাদী জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এই সম্মেলন দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে নতুন আলোয় দেখার সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি বুদ্ধিবৃত্তিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে।
অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান থেকে সাংবিধানিক অভিযাত্রা পর্যন্ত-বাংলাদেশের ইতিহাস নিজেই গণতন্ত্রের সংগ্রামের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বাংলাদেশে গণতন্ত্র কখনোই উপহার হিসেবে আসেনি, এটি ত্যাগ ও আত্মদানের মধ্য দিয়েই অর্জিত হয়েছে। তবুও, আপনারা সবাই জানেন গণতন্ত্র কোনো একবারের অর্জন নয়। একে ধারাবাহিকভাবে লালন করতে হয়, সুরক্ষিত রাখতে হয় এবং নিয়মিতভাবে নবায়ন করতে হয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, ইনস্টিটিউশন এবং নাগরিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে অর্থবহ সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন শাখার গবেষক ও বাস্তব প্রয়োগকারীদের একত্রিত করার যে দূরদর্শী উদ্যোগ আপনারা নিয়েছেন, তার জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
একই ভেন্যুতে আগামীকাল মঙ্গলবার শেষদিনের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন কনফারেন্সের কী-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান। অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন।
কনফারেন্সে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অধ্যাপক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকগণ ফিচার স্পিকার ও ডিস্কাসেন্ট হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আয়োজকরা জানান, সম্মেলনের জন্য জমা পড়া প্রায় ১৬৫টি গবেষণাপত্রের মধ্য থেকে বাছাই করে ৬৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।
এতে অনলাইনে প্রায় ২০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এবং বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশ থেকে এই সম্মেলনে পেপার প্রেজেন্ট করার আগ্রহ এবস্ট্রাক্ট সাবমিট করেছে।