বাসস
  ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:১৮

নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না : মির্জা ফখরুল

রোববার ঠাকুরগাঁও মানব কল্যাণ পরিষদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মাঠে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : বাসস

ঠাকুরগাঁও, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। বিভেদ হলে চক্রান্তকারীরা সুযোগ নেবে। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

আজ রোববার ঠাকুরগাঁও শহরের গড়েয়া রোডে মানব কল্যাণ পরিষদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মাঠে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশ একটা ক্রান্তিকালীন সময় পার করছে, বিভিন্ন রকম কথাবার্তা উঠছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, দেশকে অস্থির করে তোলার জন্য কিছু মানুষ পিছন থেকে ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের এই সময়টাতে সাবধান থাকতে হবে, যেন আবার কোনো অন্ধকারের দিকে চলে না যায়।’

তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশকে অস্থির করতে কিছু মানুষ পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করছে। এ নির্বাচন ভন্ডুলের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, সেটা যেন কেউ করতে না পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভুল করেও আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। বিভেদ হলে চক্রান্তকারীরা সুযোগ নেবে। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে এ দেশ কারা পরিচালনা করবে, তা আপনাদেরই নির্ধারণ করতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চলছে। গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং কিছু মানুষকে অতি ধনী করতে ব্যাংক ব্যবস্থা লুটপাট করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ১১ বার কারাগারে গিয়েছি। আমার অপরাধ আমি গণতন্ত্র চেয়েছি, সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছি। সেই সময়ে আমরা কেউই নিরাপদ ছিলাম না। মানুষ রাস্তায় চলাফেরা করতে ভয় পেত, কখন জঙ্গি বানিয়ে তুলে নিয়ে যাবে, সেই আতঙ্কে দিন কাটত।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই প্রথম সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেছিলেন। কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না, এটাই বিএনপির অবস্থান। একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে, বিএনপি নাকি কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক আইন চায় না। বাস্তবতা হলো, বিএনপি সবসময় কোরআন ও সুন্নাহর আদর্শের মধ্যেই থাকতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর আমরাও শান্তি চাই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। অথচ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, আর তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিএনপিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।’

২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ঢাকা শহর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ছয় বছর কারাগারে আটক রাখা হয় এবং সেখানে তার যথাযথ চিকিৎসা ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি।’

ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ইসলাম নিয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল না। পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই প্রথম ওলামায়ে কেরামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সামনে নিয়ে আসেন এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।’

আসন্ন নির্বাচনের ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকার গঠন করলে সারা দেশের মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নে মাসিক সম্মাননা  প্রদান করা হবে।

তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শহীদ ওসমান হাদি, আবু সাঈদসহ আগস্ট আন্দোলনে আত্মদানকারী সকল শহীদকে স্মরণ করেন।

বিএনপির সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বলে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কথা পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা এ দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, আমাদের ধর্মবোধ ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য আমরাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি।’

এসময় তিনি আলেম-ওলামাদের কাছে ভোটের পাশাপাশি অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চান।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, ঠাকুরগাঁও বড় মসজিদের খতিব মাওলানা খলিলুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা হাফেজ রশিদ। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে আগামীকাল সোমবার মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন  বলে মতবিনিময় সভা থেকে ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।