শিরোনাম

।।মোফাজ্জেল হোসাইন।।
বরিশাল, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে বরিশালে হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। শীতের প্রকোপ বাড়তে না বাড়তেই বাড়ছে নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা। শয্যার তুলনায় রোগীর চাপ বাড়ায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে এক বেডে ৩ থেকে ৪ জন শিশুকে। অন্যদিকে বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তবে সংকট থাকলেও রোগীদের সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দুটি শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেড়েছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪১ শয্যার বিপরিতে ভর্তি আছে প্রায় ৩০০ শিশু। আর দুটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত ১৫০ এর বেশি রোগী।
একইভাবে হাসপাতালের বহিঃভাগেও রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে পাঁচজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুদের অবিরাম চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
অনেকই গ্রাম থেকে শিশুদের নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ শিশুর জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ায় স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাইয়েছেন। কিন্তু অনেক শিশু সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
রোগীদের স্বজনেরা বলছেন, শীত বারার সাথে সাথে পেটে ব্যথ্যা, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া নিয়ে তারা হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজন আকলিমা বেগম বলেন, প্রথমে গ্রামে ডাক্তার দেখাই। জ্বর কমে বাড়ে। পরে বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে পরিক্ষা পর জানা যায় বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েছে। হাসপাতালে বেড সংকট থাকায় দূর্ভোগে পরেছেন অনেকেই। তারা এক বেডে দুই থেকে তিন জন রোগী ভর্তি থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আরেক রোগীর স্বজন লিমা বেগম বলেন, স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ানোর পরও জ্বর ও কাশি না কমায় বরিশাল নিয়ে আসি। পরে জানতে পারি নিউমোনিয়া। এখন চিকিৎসা চলছে। আরেক রোগীর স¦জন জানান, ২-৩ দিন ধরে জ্বর, কাশি তাই হাসপাতালে এসেছি। আগেও ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু জ্বর থেমে থেমে আসে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, আন্ত-ওয়ার্ড ছাড়াও বহির্বিভাগে সরকারি খোলার দিন চিকিৎসা নিচ্ছে গড়ে ৫০০ এর অধিক শিশু। এদের মধ্যে এখন বেশিরভাগই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। অনেকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন। আগের তুলনায় দেড়গুণ রোগী বেড়েছে বলছেন চিকিৎসকরা।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নুরুল আলম বাসসকে বলেন, এখন হাসপাতালে স্বাভাবিকের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সকাল ৯টা থেকে ২ টা পর্যন্ত ডিউটি থাকলেও এখন তিনটা পর্যন্ত রোগী দেখতে হচ্ছে। এখন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এধরনের রোগী সামনে আরো বাড়বে। এছাড়া মা তার সন্তানকে যে কাপর দিয়ে ঢেকে রাখে তাতে ঘাম থেকেও শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই মায়েদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, চিকিৎসক ও বেড সংকট থাকলেও তারা রোগীদের সবোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এসব সংকট দূর করা গেলে সেবার মান আরও বাড়ানো যাবে বলে মনে করেন হাসপাতালটির।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মসিউল মুনীর বাসসকে বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা কম। তারপরও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। চিকিৎসকদের চেয়ে বেশি বেগ পোহাতে হয় নার্সদের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে আমরা কথা বলছি। বহির্বিভাগেও চিকিৎসক কম। তবে সব রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই সময়ে সকল অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ তার।
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনেই ঠান্ডাজনিত রোগের সংক্রামণ বাড়ছে বলেও জানান চিকিৎসকরা। সচেতনতা বাড়ালে ও চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিলে ঠান্ডাজনিত রোগের সংক্রমণ কমবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে, গত তিনদিন ধরে বরিশালে ঘন কুয়াশার পাশাপাশি আকাশ মেঘলা থাকায় সূর্যের স্থায়ীত্ব বেশি সময় না থাকায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
বরিশালের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার বরিশালের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত তিন দিন ধরে একই অবস্থায় চলছে। চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামনে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দিনে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সুর্যের দেখা মিলছে। সূর্যের স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ না থাকার কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।