শিরোনাম

বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : লালমনিরহাটে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন কষ্টে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় জেলা আচ্ছন্ন থাকায় যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলতে হয়েছে। শীতের প্রভাবে শ্রমজীবী, নিম্ন আয়ের মানুষ, শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে নদীপাড় ও চরাঞ্চলের মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখি বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। একইসঙ্গে শীতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র রায় বাসসকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৫ সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ১০০ শতাংশ। তিনি বলেন, আগামী ২ থেকে ৩ দিন তাপমাত্রা একই রকম থাকবে, তবে মাসের শেষে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার ঘন কুয়াশায় সারাদিন সূর্য দেখা মেলেনি। এতে কৃষকরা শাকসবজি সংরক্ষণ ও উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত। অন্যদিকে তীব্র শীতে কাজের জন্য বের হওয়া মানুষ, বিশেষ করে নদীপাড় ও গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে পড়েছেন। পাশাপাশি শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
জেলা সদরের গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীপাড়ের কৃষক আলতাফুদ্দিন জানান, ঘন শীতে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে, কারণ ঠান্ডা বেশি এবং বাড়িতে তেমন পর্যাপ্ত মোটা জামা নেই। আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের হোটেল শ্রমিক আলম মিয়া বাসসকে জানিয়েছেন, কনকনে ঠান্ডায় রাত-দিন সমান কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের ভ্যানচালক আব্দুস সালাম বলেন, কাজ না করলে সংসার চলবে না—তাই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের কৃষিশ্রমিক জলিল হক জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাত-পা বরফের মতো হয়ে যায়, তবুও জীবিকার তাগিদে কাজে করে যেতে হচ্ছে।
জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে শীতের তীব্রতায় শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, জানিয়েছেন নবজাতক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তপন কুমার রায়। তিনি বাসসকে বলেন, শীতে শিশুদের রোগসংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ভর্তি শিশুদের মধ্যে সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া বেশি দেখা যাচ্ছে; কিছু শিশুর মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও খিঁচুনিও লক্ষ্য করা গেছে।
ডা. তপন অভিভাবকদের সতর্ক করে বলেছেন, শীতে শিশুদের গরম পানি পান করানো, পুষ্টিকর খাবার ও তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ানো জরুরি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানিয়েছেন, আপাতত শীত ও ঠান্ডায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা নেই এবং কৃষকদের ক্ষতি রোধে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বাসসকে জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। এটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।