শিরোনাম

আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় “জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ও টেকসই পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজন সমন্বিত স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কাঠামো শক্তিশালী করণ” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোলা সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্থার ক্লাইমেট চেঞ্জ এর প্রধান এম.এ হাসানের সঞ্চালনায় ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিানারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান।
প্রধান অতিথি বলেন, তীব্র নদী ভাঙ্গনের কারণে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে সব হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন। প্রকৃতির বাহিরে গিয়ে আমরা কিছুই করতে পারবোনা। অভিযোজন করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। উন্নত বিশ্ব পরিবেশ দূষণ করছে, অথচ তারাই আবার আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার উপদেশ দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, সুপেয় পানির সংকট নিরসন, স্থানীয় পর্যায়ে বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলেই আর সেখানকার মানুষ বস্তুচ্যুত হবে না। এ জন্য আমাদের সরকারসহ সকলকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতি মোকাবেলায় সরকারের বিদ্যমান উদ্যোগসমূহ অপর্যাপ্ত, বিচ্ছিন্ন ও স্বল্পমেয়াদি। উদ্যোগের বড় অংশই দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ ও অস্থায়ী পুনর্বাসনে সীমাবদ্ধ। পুনর্বাসনের জন্য আবাসন নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হলেও টেকসই জীবিকা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকে। সংকট মোকাবেলায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতিকে জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বাজেটে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, কমিউনিটি-ভিত্তিক টেকসই পুনর্বাসন ও জীবিকা ভিত্তিক অভিযোজন কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করাসহ ভবিষ্যৎ ঝুঁকি হ্রাসে টেকসই উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা অতীব জরুরী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, সরকারি খাস জমিগুলো বেশিরভাগই নদীর পাড়ে ও চরাঞ্চলে। মূল ভু-খন্ডের নিরাপদ জায়গায় যদি বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর জন্য বসবাসের স্থান নির্ধারণ করা যেত, তা হলে তারা বাস্তুচ্যুত হতো না। এছাড়া আমাদের নদীর ধারের স্লুইচ গেইটগুলোর সংস্কার না করায় পানি নিষ্কাশন ব্যহত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বেড়িবাধের উচ্চতা কমছে।
সরেজমিনে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি মো. আব্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা বিচ্ছিন্ন চর চটকিমারার বাসিন্দা। যেখানে সামান্য আবহওয়া খারাপ হলেই ভোলা সদরের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকে। আমাদের নেই কোনো বেড়িবাঁধ, ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা আতংকে থাকি। আমাদের এলাকায় কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও নেই কোন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, যার মাধ্যমে এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
স্থানীয় গৃহবধূ আসমা বেগম বলেন, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর সাথে আমার ঘরটি থাকায় আতংকে আছি। আগামী বর্ষায় থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আমার পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো আমি জানি না। তাই আমাদের তেঁতুলিয়া নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের ক্লাইমেট চেঞ্জ এর প্রধান এম.এ হাসান।
তিনি বাসসকে বলেন, জলবায়ু বাস্তচ্যুতি মোকাবেলায় কেবল জরুরি সহায়তা বা বিচ্ছিন্ন পুনর্বাসন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন স্থানীয় পর্যায়ে শক্তিশালী, সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনা কাঠামো। যা বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবন, টেকসই পুনর্বাসন ও ভবিষ্যৎ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নিশ্চিত করবে।
তিনি আরো বলেন, বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে কাছাকাছি কাজ করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের কারিগরি দক্ষতা, অর্থায়ন ও সমন্বয় ক্ষমতা সীমিত। স্থানীয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে পারলে পুনর্বাসন কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই হবে।
এছাড়াও সেমিনারে সিনিয়র সংবাদিক মোকাম্মেল হক মিলন, প্রথম আলো প্রতিনিধি নেয়ামত উল্যাহ, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, নদী ভাঙ্গন কবলিত ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া এলাকার বাসিন্দা এরশাদুল ইসলাম, চর চটকিমারার মনির, হারুন অর রশিদ শিমুল, ছিদ্দিকুল্যাহ, ধনিয়া এলাকার বাবুল, ভেদুরিয়া এলাকার মাকসুদুর রহমান, মো. স্বপন, রাজাপুর এলাকার আবুল কাশেম সরদারসহ নাগরিক সমাজ, এনজিও, সাংবাদিক ও বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা মতামত ব্যক্ত করেন।