বাসস
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১৮

উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত, হাসপাতালে রোগীদের ভিড় 

ছবি: বাসস

\ রেজাউল করিম মানিক \

রংপুর, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। 

গত ২৪ ঘন্টায় উত্তরের ৮ জেলার  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও জেলা হাসপাতালে  শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বৃদ্ধ সহ  ৪৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়। 

বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডাক্তার মেশকাতুল আবেদ বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগের  প্রকোপও বৃদ্ধি  পেয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় এ বিভাগের হাসপাতাল গুলোতে ৪৫৬ জন ভর্তি হয়েছে। শীতজনিত রোগে মারা গেছে ৬ জন। বিশেষ করে শিশু ও বয়ো:বৃদ্ধদের সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।

উত্তরে দিন দিন বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সেইসঙ্গে বাড়ছে  শীতজনিত রোগে আক্রান্তে সংখ্যা। হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর ভিড়। বিশেষ করে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

উত্তরে জেলাগুলোতে  গত কয়েকদিনে কুয়াশা কম থাকলেও  ঠান্ডার প্রকোপ অস্বাভাবিক । রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেডের তুলনায় রোগী বেশি। দূর দূরান্ত থেকে এই হাসপাতালে আসছে রোগীরা।

অন্যদিকে সংকট রয়েছে এন্টিবায়োটিকের। সরবরাহ না থাকার অজুহাতে এক বেলা পেলে আর এক বেলা কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রংপুরে ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তেঁতুলিয়ায় ১২.৫, সৈয়দপুর: ১৩, রাজারহাটে ১২, দিনাজপুরে ১২.৫, ডিমলা (নীলফামারী): ১৩.৫, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২.৩, লালমনিরহাটে ১৩.৬, গাইবান্ধায় ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে গত সাত দিনে ভর্তি হয়েছে ৬১৩ জন বলে হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পঞ্চগড় আটোয়াড়ী থেকে শিশু রামকৃষ্ণ রায়কে (১২ মাস) নিয়ে এসেছেন তার মা সীমা রানী রায়। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা লেগেছিল। ৪-৫ দিনে জ্বরের সঙ্গে খুব শ্বাসকষ্ট ছিল, এখন একটু কমেছে। হঠাৎ ঠান্ডা বাড়ায় এমনটা হয়েছে। প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তারপরও কমেনি। তাই এখানে নিয়ে এসেছি।’

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে মাসফিয়া জান্নাতকে (১৬ মাস) নিয়ে এসেছেন মা রুবিনা আক্তার তামান্না। মেয়েকে নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২০ ডিসেম্বর। তিনি বলেন, ‘জ্বর আর শ্বাসকষ্ট কমছেই না। হঠাৎ ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। অনেক চিকিৎসা করার পরও না কমায় এখানে ভর্তি করাইছি।’

চিকিৎসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুই হয় না। শুধু নাপা ছাড়া কিছুই দেয় না। নেবুলাইজার দিচ্ছি। সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়। আমার বাচ্চার ইনজেকশন লাগে। কিন্তু মেডিকেল থেকে দেয় না। ২০ তারিখ ইনজেকশন দিয়েছে, ২১ তারিখ দেয়নি, পরে ২২ তারিখে কিনে দিয়েছি। একদিন দিয়ে বলে আর সাপ্লাই নাই। আমরা গরীব মানুষ ইনজেকশনের অনেক দাম তাই কিনতেও পারি না।’

৯ নম্বর ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ ইয়াসমিন আরা শাপলা বলেন, ‘আমরা যেভাবে বরাদ্দ পাই সেভাবেই এন্টিবায়োটিক রোগীদের দেওয়া হয়। সংকটের বিষয়টা পরিচালক স্যার বলতে পারবেন। তবে স্যারের নির্দেশ আছে সংকট থাকলেও যারা পাওয়ার উপযোগী তাদেরকে দেওয়া হবে।’

এদিকে ওই হাসপাতালের ১০নং শিশু ওয়ার্ডে বেডের তুলনায় চারগুণ শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে।  আজ বুধবার সকালে  ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, এক বেডে চারজন শিশু রাখা হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ৪০টি। তার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৭৮ জন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আ ন ম তানভীর চৌধুরী (নোমান) বলেন, রংপুর মেডিকেলে অনেক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। শিশুদের যা সেবা দেওয়ার দরকার সেটাই আমরা দিচ্ছি। অন্যান্য সময় রোগীর যেমন চাপ থাকে এবারও ঠিক তেমনি। তবে এবার একটু বেশি মনে হচ্ছে। বেশিরভাগ শিশুরা নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা নিয়ে আসতেছে। সেই  সঙ্গে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এজন্য রোগীদের হাইজিন মেনে চলতে হবে।

পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিশুর মায়েদের হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, বিশেষ করে খাওয়ার পরে এবং খাওয়ার আগে। শীতকালীন সময়ে যদি মাস্ক ব্যবহার করা যায় তাহলে অত্যন্ত ভালো। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ডায়রিয়া হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, একদিকে শিশুদের রোগের রোগীর চাপ অন্যদিকে আমাদের বেড সংকট, তাই এক বেডে চার-পাঁচ জন রোগী নেওয়া হয়েছে। রংপুরে আরেকটি শিশু হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ওই হাসপাতালটি চালু হলে আমাদের চাপ কমবে। আর এন্টিবায়োটিক বিশেষ করে মেরোপেনাম সংকট রয়েছে। আমরা ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সরবরাহ কম থাকায় যে রোগীরা পাওয়ার যোগ্য তাকেই দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে প্রচন্ড শীতের কারণে  দুর্ভোগ চরম হলেও শীতবস্ত্র  পাননি অসহায় ও ছিন্নমুল  মানুষরা।

রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, শীত বস্ত্র ক্রয় করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই শীতবস্ত্র মিলবে এরপরই বিতরণ করা হবে।