বাসস
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৭
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৩

তারেক রহমান মানসিকভাবে বাংলাদেশেই ছিলেন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

\ হুমায়ূন কবির \

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে। দীর্ঘ প্রায় আঠারো বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি আজ জাতীয় আবেগ, প্রত্যাশা ও আশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতার প্রবাসজীবন ও দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে এমন গণজাগরণ ও কৌতূহল বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব কমই দেখা গেছে।

দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার বেড়াজালে আটকে রেখে দেশের মাটি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো— তিনি শারীরিকভাবে বিদেশে অবস্থান করলেও মানসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও আদর্শগতভাবে সবসময়ই ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে। তার প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক কর্মসূচির কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশ, ছিল এ দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার।

সাধারণভাবে বলা হয়, নেতার অনুপস্থিতি দলে ভাঙন ধরায়, কর্মীদের মনোবল দুর্বল করে। কিন্তু তারেক রহমানের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতা।

প্রবাসে থেকেও তিনি দলের সাংগঠনিক ঐক্য অটুট রেখেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং কর্মীদের মাঝে সাহস ও আস্থা জুগিয়েছেন। দেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তিনি ছিলেন ছায়ার মতো পাশে। ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনোই জনগণের কাছে দূরের মানুষ হয়ে ওঠেননি; বরং হয়ে উঠেছেন এক নীরব প্রেরণার উৎস।

দীর্ঘ প্রবাসজীবন তার রাজনৈতিক সক্ষমতায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, বরং তাকে আরও পরিণত ও সুদূরপ্রসারী চিন্তার নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে। সাধারণত দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলে নেতার সঙ্গে জনগণের একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু তারেক রহমান সেই দূরত্বকে পরিণত করেছেন এক ভিন্নধর্মী নৈকট্যে। তিনি কখনো রাজনীতি থেকে বিরতি নেননি, বরং এই সময়কে কাজে লাগিয়েছেন দেশের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও দলীয় কাঠামো নিয়ে গভীর চিন্তা ও পরিকল্পনায়। প্রবাসে থেকেও তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, যা তাকে সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের কাছে আরও বেশি আপন করে তুলেছে।

ইংল্যান্ডে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বাস্তবতা হলো, তার জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে ও সংযত। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির সন্তান এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েও তিনি বিলাসিতা বা আড়ম্বরের পথে হাঁটেননি। লন্ডনের মতো ব্যয়বহুল শহরেও তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো জীবন যাপন করেছেন। এই অনাড়ম্বর জীবনবোধই তাকে জনগণের কাছের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ক্ষমতা বা বিত্তের অহংকার থেকে দূরে থেকে তার এই জীবনদর্শন প্রমাণ করে— তার রাজনীতি ব্যক্তিগত ভোগের জন্য নয়, বরং একটি কল্যাণমুখী ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বাংলাদেশ দীর্ঘ এক ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে এগোচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী নেতৃত্বে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে তার আগমন নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

আজকের তরুণরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে একটি রুদ্ধশ্বাস রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা তারেক রহমানের মাঝেই তাদের ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা খুঁজে পাচ্ছে।

এই তরুণরাই গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে লড়াই করেছে, রক্ত দিয়েছে। তাদের এই দীর্ঘ সংগ্রামে সাহস ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান নিজেই। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চিন্তায় বিশ্বাসী এই প্রজন্ম দেখেছে— কীভাবে একজন নেতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও অবিচল থেকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারেন। তার নেতৃত্ব তরুণদের শিখিয়েছে, ন্যায়ের পথে কখনো পিছপা হতে নেই। তার আগমনে তরুণরা আজ উজ্জীবিত, কারণ তারা বিশ্বাস করে— তারেক রহমানের হাত ধরেই গড়ে উঠবে এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে বাকস্বাধীনতা থাকবে, মেধার মূল্যায়ন হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেওয়া হবে।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের এই ঘরে ফেরা কেবল একজন ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনর্জন্মের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

যে ষড়যন্ত্র তাকে দীর্ঘদিন দূরে রাখতে চেয়েছিল, তা জনগণের ভালোবাসা ও প্রত্যাশার জোয়ারে ভেঙে পড়েছে। তার দেশপ্রেম, মানসিক দৃঢ়তা, সাদামাটা জীবনযাপন ও তারুণ্যের প্রতি অগাধ আস্থা— সব মিলিয়ে তিনি এক অনন্য নেতৃত্বের প্রতীক।

দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকতে বাধ্য হওয়া, দূরত্ব ঘুচিয়ে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সক্রিয় থাকা এবং শেষ পর্যন্ত নিজের দেশে ফিরে আসা— এই পুরো প্রক্রিয়াটি দেশপ্রেমের এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। ইতিহাস প্রমাণ করে, জনগণের হৃদয়ে যার আসন নিশ্চিত, কোনো ষড়যন্ত্রই তাকে চিরদিন দূরে রাখতে পারে না। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন আসলে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদারই ফিরে আসা।

নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যে আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, তা বাস্তবায়িত হবে— এটাই আজ মানুষের বিশ্বাস। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তার ফিরে আসা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন সূর্যোদয়ের বার্তা দিচ্ছে। এই আলোয় অন্ধকার দূর হবে, আর বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের নতুন দিগন্তের দিকে।

*লেখক : যুগ্ম মহাসচিব (আন্তর্জাতিক বিষয়ক), বিএনপি*