শিরোনাম

\ মো. মামুন ইসলাম \
রংপুর, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিদেশি আধিপত্যবাদ বিরোধী শহীদ শরীফ ওসমান হাদি ও শহীদ আবরার ফাহাদের বীরত্বপূর্ণ দেশপ্রেম এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা দু’টি একাডেমিক ভবনের ঐতিহাসিক নামকরণ করেছেন।
তারা তাদের উত্তরাধিকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই দুই জাতীয় বীরের স্মৃতি ধরে রাখতে শহীদ আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি’র দু’টি ভবনের ঐতিহাসিক নামকরণ করেন।
সোমবার জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট ভবনে ব্যানার উত্তোলন করে একাডেমিক ভবন-৩ এর নামকরণ করেন শহীদ শরীফ ওসমান হাদি ভবন এবং একাডেমিক ভবন-২ এর নামকরণ করেন শহীদ আবরার ফাহাদ ভবন।
এই সময় হিসাবরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদুল হক আলভীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ডিগ্রি অর্জনের জায়গা নয়। এখান থেকেই ন্যায়বিচার, প্রতিবাদ এবং মানবতার শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ভবনগুলোর নামকরণের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহাসিক বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে শহীদ শরীফ ওসমান হাদি এবং শহীদ আবরার ফাহাদের বীরত্বপূর্ণ দেশপ্রেম এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ চিরকাল তরুণদের জন্য দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নেজাজ আহমেদ বলেন, পরবর্তী প্রজন্ম এই ভবনগুলোর নাম দেখতে পাবে এবং জানতে পারবে যে বিদেশি আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে তাদের সিনিয়র ছাত্রদের কীভাবে জীবন দিতে হয়েছিল।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদি ও শহীদ আবরার ফাহাদ উভয়েই নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে থাকবেন। আমাদের আজকের কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো- ওদের স্মৃতি এবং চেতনা চিরকাল ধরে সংরক্ষণ করা।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রহমত আলী বাসসকে বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ও শহীদ আবরার ফাহাদের মতো দেশপ্রেমিক তরুণরা আমাদের হৃদয়ে, কথা, কাজে ও অনুশীলনে বেঁচে থাকবেন।
তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে সব দেশপ্রেমিক সন্তানের স্থান কেবল ভবনের নামফলকে নয়, আমাদের হৃদয়ের গভীরতম স্থানে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একটিও ছাড় দেওয়া হবে না, ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেটের প্রয়োজন। কিন্তু ইতিহাস তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীরাই যথেষ্ট। তাই, আমরা ভবনগুলোতে শহীদ আবরার ফাহাদ ভবন এবং শহীদ ওসমান হাদি ভবনের ব্যানার লাগিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছি।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামসুর রহমান সুমন বলেন, শিক্ষার্থীরা দায়িত্ববোধ থেকে একাডেমিক ভবন ৩-এর নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি ভবন’ এবং একাডেমিক ভবন-২-এর নাম ‘শহীদ আবরার ফাহাদ ভবন’ রেখেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের হৃদয়, অনুভূতি এবং দেশপ্রেম শহীদ শরীফ ওসমান হাদি এবং শহীদ আবরার ফাহাদের থেকে অবিচ্ছেদ্য। তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন এবং নতুন প্রজন্মই চিরকাল আমাদের মাতৃভূমিকে বিদেশি আধিপত্য থেকে রক্ষা করবেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা হতে পেরে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবির দু’টি একাডেমিক ভবন এই দেশের দুই মহান শহীদ হাদি এবং শহীদ ফাহাদের নামে নামকরণ করতে পেরে তারা গর্বিত বোধ করেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ৭ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে রাজধানীর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে আধিপত্যবাদ বিরোধী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে এই বছরের ১২ ডিসেম্বর গুলি করে গুরুতর আহত করা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।