শিরোনাম

মুন্সীগঞ্জ, ১৮ ডিসেম্বর, (বাসস) : পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরী বিধৌত মুন্সীগঞ্জ ইতিহাস আর ঐতিহ্যে লালিত জেলা। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান বিক্রমপুরের প্রাচীন জনপদ। ‘পাতক্ষীর’ এই জেলার এক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। দুইশ বছর ধরে মিষ্টিপ্রেমিদের কাছে পরিচিত একটি নাম সিরাজদিখানের সুস্বাদু মিষ্টান্ন ‘পাতক্ষীর’। পুরোনো প্রস্তুত প্রণালি ব্যবহার করে আজও স্বাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ‘পাতক্ষীর’।
জেলার সিরাজদিখানের সন্তোষপাড়ার পুলিনবিহারী দেব ও তার স্ত্রীর তৈরি কলাপাতায় মোড়ানো ‘পাতক্ষীর’ শুধু একটি খাবার নয়, একটি ঐতিহ্যের নাম। এটি একটি ইতিহাস। দুই শত বছর পেরিয়ে বাঙালির রসনাতৃপ্তির এই মিষ্টান্নটি ভৌগোলিক নির্দেশক ( জিআই) স্বীকৃতি পেয়েছে। যা এই মিষ্টান্নকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে।
সিরাজদিখানের প্রবীণরা জানান, আজ থেকে ২০০ বছর আগে সন্তোষপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পুলিনবিহারী দেব ও তার স্ত্রী প্রথমে এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন। সে সময় এলাকায় দুধ ছিল স্বাভাবিক খাদ্যপণ্য। কিন্তু ক্ষীরসা তৈরি হতো না। পুলিনবিহারী দম্পতি দুধ ঘন করে ক্ষীরসা তৈরির নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে বাজারে সীমিত আকারে বিক্রি শুরু করেন। মিষ্টান্নটির স্বাদ, রং ও আকৃতিতে নতুনত্ব থাকায় দ্রুত এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পুলিনবিহারী দেবের পর লক্ষ্মী রানী ঘোষ ও ইন্দ্রমোহন ঘোষ পরিবার ‘পাতক্ষীর’ তৈরি শুরু করেন। এখনও বংশ পরিক্রমায় এই মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়।
আদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কারিগর বিশ্বচন্দ্র রায় বলেন, দুধ দীর্ঘক্ষণ জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। তারপর তৈরি ছানা পৃথক করা হয়। সাথে গুড় বা চিনি মিশিয়ে ক্ষীরসা তৈরি করা হয়। এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে হলদে রঙের করা হয়। অত:পর ঘন ক্ষীর কলাপাতায় মোড়ানো হয়।
তিনি জানান, ৩০ লিটার দুধ থেকে ৫ কেজি পাতক্ষীর তৈরি করা যায়। পাতক্ষীর তৈরি করার জন্য স্থানীয়ভাবে দুধ সংগ্রহ করা হয়।
কারিগররা জানান, কলাপাতায় মোড়ালে মিষ্টান্ন দীর্ঘ সময় ভালো থাকে। পাতার একটি প্রাকৃতিক সুবাস ক্ষীরের সাথে মিশে বিশেষ স্বাদ তৈরি করে।
শীতের সময় পাটি সাপটা পিঠা তৈরিতে সিরাজদিখানের পাতক্ষীরের জুরি নেই। দেশ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও সামান্য পরিমাণে বাজারজাত হয়। দুধ দিয়ে তৈরি এই ক্ষীরসা ২ থেকে ৩ দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো থাকে। সিরাজদিখান বাজারের রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মা ক্ষীর ভাণ্ডারসহ স্থানীয় বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকানে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ পাতা পাতক্ষীর বিক্রি হয়। সিরাজদিখানের পাতক্ষীর চলতি বছর ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।
সিরাজদিখান বাজারের মহাগুরু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক সুশান্ত ঘোষ বাসসকে বলেন, এখানে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার পাতা পাতক্ষীর বিক্রি হয়। আধা কেজির প্রতি পাতার দাম প্রায় ৮০০ টাকা। জিআই স্বীকৃতি পাবার পর এই মিষ্টির বাণিজ্যিক প্রসার ঘটেছে।