বাসস
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৮

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধা 

রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে  বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর দিবসটি পালন করে । ছবি: বাসস

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শহীদ বুদ্ধিজীবী  দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে  বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। 

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

আজ রোববার সকাল ৭টার পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। 

তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর, স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

স্মৃতিসৌধ এলাকা  ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে মানুষের সমাগম কিছুটা কম থাকলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। 

দলে দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্যানার ও স্লোগানসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। 

এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। 

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে চিরঅম্লান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জোগায়।’

তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের আত্মত্যাগেই আমাদের ঐতিহ্য ও জাতীয় পরিচয় রক্ষা করেছে। 

তিনি বলেন, আজ আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বারবার এই ঐক্য ধরে রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করি। ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, এই ঐক্যই আমাদের শক্তি ও বিপর্যয়ের সময়ে জাতিকে অটুট রাখে। 

বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঐক্য বজায় রাখা আগের চেয়েও বেশি জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ভিপি সাদিক কায়েমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), মিরপুর কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল, গণবিশ্ববিদ্যালয়,  মহিলা পরিষদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব),  ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি), বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

উল্লেখ্য, ১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও, মূলত ১০ ডিসেম্বর ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। 

সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। 

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদেরকে বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। 

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। 

১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। 

প্রতি বছর, ১৪ ডিসেম্বর শোকের আবহে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে থাকে। 

এ দিন দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং ওড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকা।