বাসস
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩৮

কেটে গেল অনিশ্চয়তা, তফসিল ঘোষণায় পঞ্চগড়ে তরুণদের উচ্ছ্বাস বেশি

ছবি: বাসস

আবু নাঈম

পঞ্চগড়, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভোটের ট্রেন ছাড়লো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। এবারের নির্বাচন ঘিরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দেখা দিয়েছে অভূতপূর্ব উৎসাহ-উদ্দীপনা।

গত তিনটি ভুয়া ও অংশগ্রহণহীন নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা সাধারণ মানুষ এবার স্বাগত জানাচ্ছেন সত্যিকারের ভোট দেওয়ার সুযোগকে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ এবার সবচেয়ে বেশি। অনেকেই প্রায় ১০-১৫ বছর আগে ভোটার হলেও কখনো ভোট দিতে পারেননি। এবার সেই সুযোগ পেয়ে তাদের উৎসাহ যেন দ্বিগুণ।

পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার দুইটি নির্বাচনী আসনের সর্বত্রই এখন নির্বাচনী আলোচনা সরব। চায়ের দোকান, বাজার, কর্মস্থল, রাস্তার মোড়-সব জায়গায়ই তরুণদের উপস্থিতি ও আলোচনা চোখে পড়ছে।

মিজানুর রহমান (৩৫)। সদর উপজেলার তালমা বাজার চায়ের দোকানে কথা হয় তার সঙ্গে। তফসিল ঘোষণার খবরে বেশ উচ্ছ্বসিত এ যুবক। ২০১০ সালে ভোটার তালিকাভুক্ত মিজানুর ইতোপূর্বে ইউপি ও উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেও সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট দেবেন- জানান।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচনে ইচ্ছে করেই ভোট কেন্দ্রে যাইনি। ২০১৮ এর নির্বাচনে বেশ আগ্রহ নিয়েই কেন্দ্রে গিয়েছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আর দেয়া হয়নি। আর চব্বিশেওতো হলো একতরফা ডামি ভোট।

হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসিবুল ইসলাম, সম্পৃক্ত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। তিনিও এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তফসিল ঘোষণার খবরে বেশ উচ্ছ্বাস নিয়েই জানালেন এ কথা।

৩৩ বছর বয়সি এ যুবক বলেন, ২০২৪ এর নির্বাচনের মত ২০১৪ এর নির্বাচনেও কোন আগ্রহ ছিল না। তবে ২০১৮ সালে ভোট দিতে গিয়েও ঘুরে আসছি।

নতুন ভোটার সাকিব হোসেন বলেন, আমি চাই আমাদের ভোটের মূল্যায়ন হোক, আমাদের তরুণদের ভোটে দেশের ক্ষমতায় যোগ্য শাসক আসুক। আমরা পরিবর্তন চাই, উন্নয়ন চাই। এবার প্রথমবার ভোট দিতে পারবো- এই ভাবনাই আমাদের সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত করছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য ভোটের অপেক্ষা দীর্ঘ বছরের। এ দেশে বিগত আমলে যত অপকর্ম হয়েছে- তার বড় শক্তি ছিল বিনাভোটের ক্ষমতা। আমরা আর ফ্যাসিস্টের পুণরাবৃত্তি চাই না। আসন্ন নির্বাচন হবে জনগণের আকাঙ্খার।

এদিকে, তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। উঠান-বৈঠক, গণসংযোগ, দলীয় কর্মীদের চাঙা করা- সবকিছুতেই এবার তরুণদের অংশগ্রহণ বেশি নজরে পড়ছে। প্রার্থী হিসেবেও তরুণদের দেখা যাচ্ছে।

পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলা দুইটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত। ইতোমধ্যে আসন দুটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। প্রচার-প্রচারণায় থেমে নেই তারা।

পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে রয়েছে- বিএনপি মনোনীত দলটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির, জামায়াত মনোনীত দলটির জেলা আমীর মাওলানা ইকবাল হোসাইন, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটির সহসভাপতি ক্বারী আব্দুল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণ অধিকার পরিষদের জেলা কমিটির সভাপতি মাহাফুজার রহমান।

অপরদিকে, পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপি মনোনীত দলটির কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, জামায়াতের সফিউল্লাহ সুফি, এনসিপির শিশির আসাদ, বাংলাদেশ জাসদের এমরান আল আমিন।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, পঞ্চগড়ের দুইটি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ৮ লাখ ৭১ হাজার ৫২৫ জন। এর মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৬০ জন। এখানে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ১১৩ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ১৪৬ জন। এই আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে ১ জন।

অপরদিকে, পঞ্চগড়-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৩ হাজার ২৬৫ জন। এখানে পুরুষ ভোটারের ২ লাখ ৭ হাজার ৩৬৭ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৮৯৫ জন। এখানে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৩ জন।