শিরোনাম

এনামুল হক এনা
পটুয়াখালী, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) কর্নার দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে প্রতিদিন সকাল থেকেই ভীড় করেন সাধারণ মানুষ। কেউ নিয়মিত চেকআপ করাতে আসেন, কেউ আবার দীর্ঘদিন ধরে চলা নানান শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসেন ডাক্তারদের কাছে।
সরকারি এই হাসপাতালে এখন নিয়মিত চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি চালু হয়েছে এনসিডি কর্নার। সেখানে রোগীদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের বিনামূল্যে বিশেষায়িত সেবা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা আরও বেড়েছে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাজনি রানি দাস (৬০) বলেন, ‘আমার বই করা আছে। মাসে একবার এসে ফ্রি চেকআপ করি। সরকারিভাবে ফ্রিতে ওষুধ পাই। এতে আমি খুব খুশি।’
সাজনির মতো অনেক রোগীই প্রতিদিন সরকারি এই সেবা গ্রহণ করছেন। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য এই কর্নারটি যেন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
রহিমা বেগম (৪৮) বলেন, ‘প্রেশার হাই ছিল। এখানে এসে নিয়মিত চাপ মাপাই, ওষুধ পাই। ডাক্তাররা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন কী করতে হবে। ফ্রি সেবা পেয়ে খুব স্বস্তিতে আছি।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগীকে এনসিডি কর্নারে সেবা নিতে বই দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে। সেখানে রোগী কোন রোগে ভুগছেন, কী ওষুধ নিয়েছেন, কখন আবার আসবেন—সেসব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। যার ফলে চিকিৎসা সেবা আরও সহজ ও ধারাবাহিক হয়েছে।
এছাড়া এই কর্নারের সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলো, নির্ধারিত তারিখে কোন রোগী না আসলে হাসপাতাল থেকেই ফোন করে তার খোঁজ নেওয়া হয় এবং সেবা নিতে উৎসাহিত করা হয়।
৫৫ বছর বয়সী ডায়াবেটিস রোগী আব্দুল খালেক বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি। আগে বাজার থেকে ওষুধ কিনতে কষ্ট হত। এখন এনসিডি কর্নার থেকে নিয়মিত ওষুধ পাই। তারা ফোন করেও খোঁজ নেয়, এটা খুব ভালো লাগে।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুধু ওষুধ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করি না। বরং রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না, সেটিও নিশ্চিত করতে ফোন দিই। অনেক রোগী নিয়মিত না এসে ওষুধ বন্ধ করে দেন, এতে শরীরের ক্ষতি হয়। তাই ফোন কল সিস্টেম রোগীদের সচেতন করতে কার্যকর।’
চিকিৎসকরা জানান, অনেক রোগী দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করানো বা ডাক্তারের পরামর্শ না মানার কারণে জটিলতায় ভোগেন। তাই এই কর্নারের মাধ্যমে রোগীদের নিয়মিত চেকআপে ফিরিয়ে আনা যেকোন জটিলতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বাসসকে বলেন, ‘আমরা এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের নিয়মিত ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। রোগীরা যাতে ওষুধ নিতে ভুলে না যান, সেজন্য নির্ধারিত তারিখে ফোনে মনে করিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের লক্ষ্য উপজেলার প্রতিটি রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা ও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো।’