শিরোনাম

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস) : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম শুল্কে বেশ কয়েকটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের শুল্ক প্রস্তাব অনুমোদন করার পর বছরে প্রায় ৪২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘পূর্বের চুক্তিগুলো বাতিল করা হয়েছিল কারণ মূল্য অতিরিক্ত ধরা হয়েছিল। যেকারনে সরকার একটি স্বচ্ছ পদ্ধতিতে সেগুলোর পুনঃদরপত্রের আহ্বান করেছে।’
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘১২টি প্রকল্পের প্রতিটিতেই আমরা আগের তুলনায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দুই থেকে তিন সেন্ট কম দরে পেয়েছি। শুধু এই কারণেই বছরে ৪২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’
তিনি বলেন, আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা আর্থিকভাবে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাই বাংলাদেশকে অবশ্যই ধীরে ধীরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে।
তবে তিনি অভিযোগ করেন যে সৌর খাতে পূর্বের অনিয়মের সাথে জড়িত সুবিধাভোগী মহল এই পরিবর্তনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সৌর প্রকল্পের অতীতের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পূর্বে সরবরাহ করা সৌর প্যানেলগুলো প্রায়শই মাঠ পর্যায়ে খুঁজে পাওয়া যেত না।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আগে দুর্নীতির মাধ্যমে লাভবান হয়েছিল, তারা এখন উন্মুক্ত দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে দরদাতাদের নিরুৎসাহিত করছে। এ কারনে কিছু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত দরপত্র পাওয়া যায়নি।’
সরকারের রুফটপ সোলার প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের সবাই সহযোগিতা করছে না।’
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সংস্থায় দরপত্র জমা পড়লেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে (আরইবি) কোনো দরপত্র জমা পড়েনি বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, মাঠ পর্যায়ে অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করার জন্য অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করা হয়েছে-যেমন বাধ্যতামূলক ট্রান্সফরমার স্থাপন।
তিনি সম্প্রতি বরিশাল সফরের সময় দেখেছেন যে ওয়েস্টার্ন জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তার প্রকল্পের জন্য দরপত্র পেয়েছে, কিন্তু স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো পায়নি।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য উদ্যোগে বাধা সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আরইবি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়া থেকে দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছি। এই পরিবর্তনে যেকোনো বাধা অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে।’
ফাওজুল কবির খান জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্রুত সম্প্রসারণের ওপর। কারণ দেশে বৃহৎ আকারের এলএনজি আমদানি চালিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই।
অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ১০ মেগাওয়াট থেকে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এক ডজনেরও বেশি গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুল্ক প্রস্তাব এবং একটি ২১০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড-সাইকেল প্ল্যান্টের সংশোধিত শুল্ক অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সরকারি নথি অনুযায়ী সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিপিডিবি কর্তৃক দাখিল করা ফটিকছড়ি, পাবনা, নোয়াখালী, হাটাজারী, মৌলভীবাজার, চকরিয়া, নীলফামারী, রামু, বিবিয়ানা, মংলা এবং হেমায়েতপুরের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাবগুলো কমিটি বিবেচনা করেছে।