বাসস
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২০

বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে আস্থা দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের 

ছবি: বাসস

বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে আস্থা দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের 

এনামুল হক এনা

পটুয়াখালী, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): জেলার বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নার দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের নতুন ভরসার স্থান হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জমে সাধারণ মানুষের। কেউ নিয়মিত চেকআপ করাতে আসেন, কেউ আবার দীর্ঘদিন ধরে চলা নানান শারীরিক সমস্যা নিয়ে ছুটে আসেন ডাক্তারদের কাছে। সরকারি এই হাসপাতালে এখন নিয়মিত চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি চালু হয়েছে এনসিডি (Non-Communicable Diseases) কর্নার। যেখানে হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সেবা নিতে আসা বাউফল পৌর এলাকার বাসিন্দা সাজনি রানি দাস (৬০) খুব সন্তুষ্টির সাথে বললেন, আমার বই করা আছে। মাসে একবার এসে ফ্রি চেকআপ করে যাই। সরকারি ফ্রি ওষুধ পাই। এতে আমি খুব খুশি। সাজনির মতো প্রতিদিন অনেক রোগীই সরকারি এই সেবা গ্রহণ করছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারটি এখন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় আব্দুল খালেক (৫৫) বলেন, ডায়াবেটিস অনেক দিন ধরে। আমরা নিম্নআয়ের মাসুষ। তাই বাজার থেকে ওষুধ কিনতে কষ্ট হতো। এখন এনসিডি কর্নার থেকে নিয়মিত ওষুধ পাই। ফোন করেও খোঁজ নেয়—এটা খুব ভালো লাগে।

সেবা নিতে আসা আরেক রোগী রহিমা বেগম (৪৮) বলেন, আগে প্রেশার হাই ছিল। এখানে এসে নিয়মিত প্রেশার মাপাই, ওষুধ নিই। ডাক্তাররা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় কী করতে হবে। ফ্রি সেবা পেয়ে খুব স্বস্তিতে আছি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক রোগীকে এনসিডি সেবা বই দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন করা হয়। কোন রোগী কোন রোগে ভুগছেন, কী ওষুধ নিয়েছেন, কখন আবার আসবেন—সব তথ্যই বইতে লিপিবদ্ধ থাকে। যার ফলে চিকিৎসা সেবা আরও সহজ এবং ধারাবাহিক হয়েছে।

এনসিডি কর্নারের একটি বিশেষ উদ্যোগ রোগীদের চোখে সবচেয়ে প্রশংসনীয়। যেদিন রোগীর পুনরায় হাসপাতালে আসার তারিখ নির্ধারিত থাকে, সেই দিন তিনি না এলে কর্নার থেকে রোগীকে ফোন করা হয়। এভাবে যোগাযোগ করে রোগীকে আবার সেবা নিতে উৎসাহ দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা শুধু ওষুধ দিয়েই দায় শেষ করি না। বরং রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না, সেটি নিশ্চিত করতেও আমরা ফোন দিই। অনেক রোগী নিয়মিত না আসায় ওষুধ বন্ধ করে দেন, ফলে তাদের শরীরের ক্ষতি হয়। তাই ফোন কল সিস্টেম রোগীদের নিয়মিত আনার ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই বিনামূল্যে ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার মাপা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ইসিজি করানোর সুযোগ রয়েছে। এনসিডি কর্নারের অধীনে যে রোগীরা নিবন্ধিত, তারা নিয়মিত হার্ট, প্রেসার ও ডায়বেটিসের ওষুধ পান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

আরেক রোগী জানান, বাজারে ওষুধের দাম অনেক বেশি। এখানে এসে ফ্রি ওষুধ নিতে পারায় আমাদের অনেক উপকার হয়। মাসে একবার চেকআপ করিয়ে শরীরের অবস্থাও জেনে নেই।

বর্তমান সময়ে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে ভুগছেন অনেক মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব রোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নার তাই রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অনেক রোগী দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করানো বা ডাক্তারের পরামর্শ না মানার কারণে জটিলতায় ভোগেন। তাই এই কর্নারের মাধ্যমে রোগীদের নিয়মিত চেকআপে ফিরিয়ে আনা যেকোনো জটিলতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

স্থানীয়রা বলছেন, নিত্যদিনের স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা যোগ হওয়ায় এখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সমুখী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি বড় বিষয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসন জানান, ভবিষ্যতে কর্নারের সেবা আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্যাভ্যাস পরামর্শ, নিয়মিত ফিটনেস মনিটরিং—এসব উদ্যোগও ধীরে ধীরে যুক্ত করা হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি হাসপাতাল মানে আর শুধু ওষুধ লেখা নয়—বরং দায়িত্বশীল সেবা। নিয়মিত ফোনে খোঁজ নেওয়া থেকে শুরু করে ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ সব মিলে এটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনকে সহজ করেছে।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বলেন, “আমরা এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের জন্য নিয়মিত ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। রোগীরা যাতে ওষুধ নিতে ভুলে না যান—সেজন্য তাদের নির্ধারিত তারিখে ফোনে মনে করিয়ে দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক রোগীকে সেবা বই দেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো—বাউফলের প্রতিটি রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা ও তাদের জটিলতা কমানো।”