শিরোনাম

\ সুলতান মাহমুদ \
নড়াইল, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নড়াইল মুক্ত দিবস আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে নড়াইলের মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের হাত থেকে নড়াইলকে মুক্ত করেন।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে নড়াইলের তৎকালীন সাব ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী লোহাগড়া হাইস্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের যশোর অভিমুখে পাঠিয়ে দেন। ৬ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনীর দুটি জেট বিমান থেকে নড়াইল শহরের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলে শহর মানবশুন্য হয়ে পড়ে।
১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে এবং ৩ জনকে ধরে নিয়ে যশোরের দাইতলা পুলের কতাছে গুলি করে ফেলে রেখে চলে যায়।
এদিকে লোহাগড়ার ইতনা ও আড়িয়ারায় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিবির খোলার কারণে মধুমতি-নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ভাটিয়াপাড়াস্থ হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পের পাক সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়। তাদের দোসরদের সহযোগিতায় মধুমতি নদী গানবোট যোগে পার হয়ে ২৩ মে ইতনা গ্রামে ঢুকে তারা নৃশংসভাবে ওই গ্রামের ১৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, মুক্তিকামী হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে নড়াইলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে ওঠে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে তুমুল যুদ্ধ। শুধুমাত্র চিত্রা নদীর পাড়ে প্রধান ডাকঘরের পাশে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী ও রাজাকাররা।
এছাড়া নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান তরফদার, আব্দুস সালাম তরফদার, রফিউদ্দিন তরফদার, মাহতাব তরফদার ও আলতাব তরফদার এবং মোকাম মোল্যা, কাইজার মোল্যা ও মকবুল হোসেন সিকদারকে ধরে এনে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেতরে গণ-কবর দেয় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।
৭১ এর অক্টোবর মাস থেকে জেলার মুক্তিপাগল মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মাতে থাকে যে হানাদার বাহিনী বা তাদের দোসররা আর বেশিদিন টিকতে পারবে না। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকেই নবগঙ্গা নদীর উত্তর ও পূর্বাঞ্চাল হানাদার মুক্ত হয়ে যায়। লোহাগড়া থানায় অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তারা না করায় ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারের কয়েকটি গ্রুপ সম্মিলিতভাবে তিন দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।
৯ ডিসেম্বর বিজয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত ৪০ জন পাক মিলিটারিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তারা অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা চর্তুদিক থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক মিলিটারিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এখানে একজন পাক মিলিটারি নিহত হয় এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
প্রবল শীত উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সারারাত শহরে বিজয় উল্ল¬াস করতে থাকেন এবং ১০ ডিসেম্বর দুপুর একটা ১৫ মিনিটে নড়াইলকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম জানান, নড়াইল মুক্ত দিবসে জেলা প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় জজ কোর্ট সংলগ্ন চিত্রা নদীর পাড়ে অবস্থিত বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ১০টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বরের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া অনুষ্ঠান, পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা।